ভ্রমণ ও সাপের কামড় ছাড়া অন্য লেখাগুলি 

 

 

পুরাণ আর উপকথায় সাপ

ভারতীয় প্রাচীন সাহিত্য, পুরান ইত্যাদিতে অনেক সাপের কাহিনী আছে। বিখ্যাত ভাগবত পুরাণ শুরুই হয়েছে এক সাপের ব্যাপার দিয়ে। মহাভারতের অর্জুনের নাতি রাজা পরীক্ষিত,  এক ব্রাহ্মণ বালকের অভিশাপে সাত দিনের মধ্যে সাপের কামড়ে মারা যাবেন। এটা জেনেই উনি শান্তভাবে মৃত্যুর জন্য তৈরী হলেন। কিন্তু নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা ভেদ করে, একটি ক্ষুদ্র পোকার চেহারা নিয়ে, তক্ষক সাপ রাজা পরীক্ষিতকে মেরে ফেললেন। ঘটনাচক্রে এখন আমরা সবাই জানি, তক্ষক নামে পরিচিত প্রাণীটি আদৌ কোন সাপ নয়, এটি একটি গিরগিটি জাতীয় প্রাণী। এদের বিষ নেই। 

এই তক্ষক এর কাহিনীর পিছনে বেশ পুরোনো গল্প আছে। মহাভারতের অর্জুনের খান্ডব বন দহন করার সময় তক্ষকের বংশের অনেকেই মারা যায়। বিনা দোষে অর্জুন তাঁর এতবড় ক্ষতি করায় তক্ষক রাগ পুষে রাখে। তার ফলশ্রুতিতে রাজা পরিক্ষিতকে হত্যা। আবার মহাভারতের কথা শুরু হয়েছে, জনমেজয়ের সর্প যজ্ঞ থেকে । এই জনমেজয় হলেন রাজা পরীক্ষিতের পুত্র। বাবাকে সাপে মেরেছে, তাই পৃথিবীর সব সাপ মেরে ফেলার জন্য জনমেজয় এই সাপ মারার ব্যবস্থা করেন। এই যজ্ঞে এসে হাজীর হলেন সুত লোমহর্ষন। উনি এখানে অন্যান্য মুনী ঋষিদের মহাভারতের কাহিনী বলতে শুরু করেন। 

মহাভারতের মহা নায়ক ভগবান শ্রী কৃষ্ণ। শ্রী কৃষ্ণের বৃন্দাবন লীলায় আছে , কালীয় নাগ দমনের কাহিনী। পণ্ডিতেরা বলেন, এই কালিয় নাগ আসলে কোন সাপ নয়। উনিও অনার্য নাগ বংশের নেতা ছিলেন। যমুনার কিছুটা এলাকা উনি দখল করে রাখায় বৃন্দাবনের লোকেদের সমস্যা হয়েছিল, তাই শ্রী কৃষ্ণ কালীয়কে সেই এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেন।

শ্রী কৃষ্ণ যখন মথুরায়, সেই সময় জরাসন্ধের মত কাল যবন নামের আর এক রাজার সাথে মথুরার যুদ্ধ শুরু হয়। কাল যবন একটি বিষধর কাল সর্প মাটির হাঁড়িতে ভরে শ্রী কৃষ্ণের কাছে পাঠিয়ে দেয়। এটা কিন্তু সত্যিকারের সাপই ছিল। কিন্তু মহাভারতে আর এক জায়গায় আর এক মহা সর্পের কাহিনী আছে। 

বনবাসের সময় অর্জুন হিমালয় পর্বত পেরিয়ে স্বর্গে গেছলেন , দেবতাদের কাছ থেকে দিব্যস্ত্র সংগ্রহ করতে। অর্জুনের ফেরার সময় হলে বাকি চার ভাই আর দ্রৌপদী হিমালয়ের দিকে এগিয়ে যান। এই সময় একদিন ভীম, হিমালয়ের এক গুহায় বসে থাকা মহা স্বর্প নহুষের কাছে বন্দি হয়ে যান। এই মহা সর্প ভীম কে এমন ভাবে পেঁচিয়ে ধরে রাখেন যে ভীমের নড়াচড়ার ক্ষমতা থাকে না। ওদিকে অনেকক্ষণ ভীমের দেখা না পেয়ে দাদা যুধিষ্ঠির ভিমকে খুঁজতে খুঁজতে ঐ গুহার কাছে আসেন। সাপ মানুষের ভাষায় জানান যে উনি মুনীদের অভিশাপে ঐ গুহায় পড়ে আছেন, হাজার বছর ধরে। ওনার নাগালের মধ্যে যে প্রাণী আসে, তাকেই উনি ধরে খেয়ে নেন। যুধিষ্ঠিরের কাতর অনুরোধ শুনে মহাসর্প নহুস বলেন যে, আমার প্রশ্নের ঠিক উত্তর দিতে পারলে একে আমি ছেড়ে দেব। এখানে অপনাদের নিশ্চয়ই সেই যক্ষের প্রশ্নের কথা মনে পড়ছে। সেখানে বাকি চার ভাই অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিলেন। যুধিষ্ঠির যক্ষের সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ভাইদের প্রাণ বাঁচান। এখানেও সাপ রূপী নহুশের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ভীমকে মুক্ত করেন। ঠিক উত্তর পেয়ে সাপ নহুষ নিজেও অগস্ত্য মুনীর অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়ে স্বর্গে ফিরে যান। এই রাজা নহুসের কাহিনী বেশ শিক্ষামূলক। মর্তের রাজা নহুশ নিজ কীর্তি বলে একদিন স্বর্গের রাজা হয়ে যান। প্রচণ্ড অহংকারে উনি সপ্ত ঋষিদের দিয়ে নিজের পাল্কি বওয়াতে শুরু করেন। এমনকি পাল্কি থেকে পা বের করে অগস্ত্য মুনীর মাথায় লাথি মারেন। তখন মুনীর অভিশাপ মত মর্তে পতিত হন। 

মহাভারত বা ভাগবতের তুলনায় অর্বাচীন সাহিত্য হল মনসামঙ্গল কাব্য। এখানে সাপেদের দেবী মনসার ক্ষমতা দেখানোর জন্য চাঁদ সদাগরের ছেলে লক্ষিন্দরকে সাপের কামড় দিয়ে মেরে ফেলার গল্প তৈরী করা হয়েছে। কিন্তু সাপের কামড় খেয়ে মরে যাওয়ার পর আবার কি করে বেঁচে ফিরল? মনসার ক্ষমতা, তুকতাক মন্ত্রের জোর,  এসব নিয়ে যারা কয়েকশ বছর ধরে ব্যবসা করে যাচ্ছে তারা এখনও গ্রামের অশিক্ষিত, অর্ধ শিক্ষিত মানুষের কুসংস্কার আচ্ছন্ন মন ভুলিয়ে দু পয়সা করে খাচ্ছে। ওদের ঐ বুজরুকি বন্ধ করতে, বিজ্ঞান মনষ্ক মানুষেরা নানান ভাবে ব্যাখ্যা করে থাকেন। আসল কথা হল, মনসা মঙ্গল তো মানুষের মন গড়া কাব্য সাহিত্য, তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা করতে হবে কেন? আমি যদি আধুনিক রূপকথার ঝাঁটায় চড়ে আকাশে ওড়ার বিজ্ঞান খোঁজার চেষ্টা করি ব্যাপারটি ঠিক ঐ রকম হবে। বসন্ত বা কলেরা রোগের জীবাণু আর চিকিৎসা আবিষ্কারের আগে লোকে ঐ অসুখ দুটির জন্যও দুই দেবীর আশীর্বাদ প্রার্থনা করত। 

সাপেদের রহস্যময় ব্যবহার, ওদের কারো কারো কামড় চোখের সামনে দেখা মানুষগুলিকে মরতে দেখা এসব কারণে ওদের নিয়ে নানান রূপকথা চালু রেখেছে। নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, ডাক্তার বা চিকিৎসার চিহ্ন হিসেবে যে ছবিটি ব্যবহার করা হয়, সেখানেও একটা সাপ আছে। আর আমাদের সবার শ্রদ্ধার রামকৃষ্ণ মিশনের চিহ্নেও একটি সাপ আছে। এই মিশনের সিম্বল বা চিহ্নটি স্বয়ং স্বামী বিবেকানন্দ এঁকে দিয়েছিলেন। এখানে পদ্ম ফুল, সূর্য, জলের ঢেউ আর সাপ , প্রতিটি জিনিস এক একটি গভীর দর্শনের প্রতীক। এখানে সাপ হল যোগের প্রতীক। মিশন কিন্তু সাপের পূজা করে না। ১৬.৫.২০২৫.

 2

 

আবার মুস্তাফা দর্জি 

বেশ কয়েক বছর পর আজ আবার ওনার কাছে গেলাম। সে প্রায় বছর চারেক আগে , ওনাকে নিয়ে, এই রকম  ছোট একটি নিবন্ধ লিখেছিলাম; সেই নিবন্ধ পড়ে, আমার বহু পুরাতন এক বন্ধু বেশ কঠিন একটা প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন। একটু অবাক হলেও, অসম্ভব মনে হয়নি। কারণ, আমার মত চোখ কান খোলা লোকেদের এই এক সমস্যা। সবই দেখি, সবই বুঝি। আমাদের অবস্থা, “ দেখন্তিক লাজ!” থাক সে কথা এখন। আমার প্রিয় পেশাদার মানুষটির সাথে অনেকদিন পরে দেখা হল। মাঝে গোটা পৃথিবীর উপর দিয়ে একটা মারাত্মক ঝড় বয়ে গেছে। 

হ্যাঁ, আমি কোভিড ঝড়ের কথাই বলছি। কত কে যে অকালে চলে গেলেন। আঠারো সালে একটি বিখ্যাত কোম্পানির বড় অফিসার এর সাথে দেখা করতে গেছলাম। বিরাট এক প্রস্তাব নিয়ে গেছলাম। কাজটা হলে, আপনারা বিশ্বাস করতে পারবেন না; করোনা এ রাজ্যে যত প্রাণ নিয়েছে, তার থেকেও বেশি মানুষ অকালে মারা যাওয়ার থেকে বাঁচতে পারতেন। আমাদের রাজ্যের দুর্ভাগ্য; আমাদের সেই প্রস্তাব কাজে লাগেনি সময় মত। আমার মত যে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ , সেই মারাত্মক সমস্যা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন, তাঁরা এর মধ্যেই বুঝে গেছেন। আপনি কি জানেন? জানলেও মানেন? এই রাজ্যের নিজস্ব এন্টি ভেনম না থাকার জন্য গত সাত আট বছরে , এ রাজ্যে কত মানুষ সাপের কামড়ে মারা গেছেন! সংখ্যাটা এতটাই বেশি যে সাধারণ ভাবে বিশ্বাস করা কঠিন। করোনা এ রাজ্যে যত প্রাণ নিয়েছে, সাপের কামড় এ তার অন্তত দশ গুণ মানুষ মারা গেছেন, গত সাত আট বছরে। আমরা যে বড় কর্তার সাথে দেখা করেছিলাম, তিনিও করোনায় প্রাণ দিয়েছেন। তাঁর সেই কোম্পানী এখন আবার নতুন করে উঠে পড়ে লেগেছে। সেই সুবাদে আবার আমার মত এক নগণ্য লোকের সাথে যোগাযোগ হয়েছে। আর এই জন্যই জানতে পেরেছি, সেই বড় কর্তার শেষ খবরটা। এরকম বড় কর্তার খবরই কোন কাগজে বা টিভিতে দেখিনি। তো আমার পুরনো চেনা দর্জি, আছেন কি নেই , কে তার খবর রাখে! আসলে ব্যপারটা ঠিক সে রকম নয়। আমাদের পোষাক কেনার ব্যাপারে , গত বছর ছয় সাতে একটা বিরাট পরিবর্তন হয়েছে। আগে, বছরে গোটা তিনেক করে জামা আর প্যান্ট, দর্জিকে দিয়ে সেলাই করিয়ে নিতাম। সেটা কমতে কমতে গত বছর তিনেকের মধ্যে, একেবারেই শূন্য হয়ে গেল। শেষ কবে যে দর্জির দোকানে নতুন জামা প্যান্ট বানাতে ঢুকেছি, মনেই পড়ছে না। এর মূলত দুটি কারণ আমার জন্য প্রযুক্ত। প্রথম কারনটা প্রায় সর্বজনীন। রেডি মেড পোশাকের রমরমা। আমি অবশ্য “ ব্র্যান্ডেড” - এর চক্করে নেই। ব্র্যান্ডেড এর নামে , একই পোষাক সাড়ে তিন গুণ দামে কিনতে পারি না। তবুও অবস্থা বিপাকে গত তিন চার বছরে , সব পোষাকই রেডি মেড পরছি। আমি নিজে যেকটা কিনেছি, অন্যেরা তার চারগুণ কিনেছে আমার জন্য। আজও আলমারি খুললে, গোটা দুই তিন জামার প্যাকেট বেরোবে; হয়তো এক দেড় বছর আগে এসেছে, এখনও খোলাই হয়নি। যাঁরা দিয়েছেন, হয়তো ভালোবেসেই দিয়েছেন। কিন্তু একেবারেই অপাত্রে দান, বোঝাই যায়। আসলে, আর এটাই মূল কারণ; আমি লোকটা পোশাকের ব্যাপারে একেবারেই কাছাখোলা। কতবার হয়েছে, একটা জামা বা প্যান্ট পরে বেরোচ্ছি , বিয়ে বাড়ীতে যাব। আমার স্ত্রী বা ছেলে মেয়ে কেউ বলল, এটা একটা বিযে বাড়ীতে পরার মত জামা হল? তোমার কি আর জামা নেই? ব্যস্ততার মাঝেও ওরা কেউ আলমারি থেকে একটা জামা বের করে দিল। আমি যেটা পরে বেরোচ্ছিলাম তার থেকে এটা আলাদা কি , আমি বুঝলাম না। বিরাট কোন নামি কনফারেন্স এ যাওয়ার জন্য, কোট টাই পরে গেলাম। সেখানে পৃথিবী বিখ্যাত কোন শ্রদ্ধেয় মানুষ এসেছেন জেনেই, ছুটলাম স্যারকে প্রণাম করতে। স্যার কিন্তু পরে আছেন, খুবই সাধারণ একটা হাফ শার্ট! পোশাকের গুরুত্ব আজও আমি বুঝলাম না।  পৃথিবী বিখ্যাত চোখের হাসপতালের গেটে দাঁড়িয়ে দেখেছি, পৃথিবী বিখ্যাত প্রধান সার্জন, হাসপতালের সর্বময় কর্তা, সাধারণ প্যান্ট শার্ট পরে, একটা সাধারণ স্যান্ডেল পায়ে ঢুকলেন। 

মূলত ঐ রেডি মেড পোশাকের চাপেই,  আস্তে আস্তে দর্জির দোকানে যাওয়া বন্ধই হয়ে গেল। আমার গোটা তিনেক শীতের জন্য, মোটা কাপড়ের জামা আছে। গত শীতেও সবকটা বের করতেই হয়নি। মাস ছয় হল প্রায়ই পাহাড়ের দিকে বেড়াতে যাচ্ছি। তাই মনে হল , একটা শীতের জামা করেই নিই। বেশ বড় কাপড়ের দোকানের সামনে দিয়ে সপ্তাহে দুই একবার বাজারের ভেতরের দিকে হেঁটে যাই। কদিন আগে ওদের দোকানে ঢুকে, শীতের জামার কাপড় দেখতে চাইলাম। বলল, দোতলায় আছে, চলুন দেখাচ্ছি। সেদিন কেনার জন্য যাইনি, তাই বললাম , তাহলে থাক, পরে আসবো। আজ সন্ধ্যায় বাজারের দিকে যাওয়ার সময়, আমার প্রিয় মোস্তফা দর্জির দোকান খোলা আছে কি না দেখতে উঁকি দিলাম। দোতলায় দোকান। উনি আছেন কি না দেখতে দোতলায় উঠে গেলাম। প্রায় পাঁচ বছর পরে দেখা হল। প্রায় একই রকম চেহারা আছে। কাজে ব্যস্ত ছিলেন; আমিই ভদ্রতা দেখাতে দু একটা কথা বললাম। কতটা কাপড় কিনতে হবে জেনে,  নেমে এলাম। আবার মিনিট পনের কুড়ি পরে কাপড় নিয়ে গেলাম। হাতের কাজ থামিয়ে, জামার মাপ নিলেন। রশিদ নিয়ে চলে এলাম। ছোট্ট দোকানে বসার কোন জায়গা নেই। ওনাকেও সব সময়ই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাজ করতে দেখেছি। তাই ভদ্রতা দেখাতে, “ বসুন” বলারও কোন সুযোগ নেই। আজও খেয়াল করলাম, যেমন গোটা কুড়ি কোট তৈরী করে ঝোলানো আছে, তেমনি কুড়ি পঁচিশটি প্যান্টও ঝুলছে। মেঝেতেও কাটা কাপড় এর একটি স্তূপ। সেলাই মেশিন নিয়ে দুজন কারিগর সেলাই করে চলেছেন। অর্থাৎ, ওনার কাজের কোন অভাব নেই। আজই কাপড় কিনতে গিয়ে সেই দোকানের দোতলায় উঠলাম। একেবারে সিঁড়ির ধাপে ধাপে জামা কাপড় স্তূপাকার করে রাখা। বিশেষ করে চোখে পড়ল, রেডিমেড জামার প্যাকেট। কয়েক হাজার হবে। কোথায় তৈরী হয় এসব? একটার রং খুব পছন্দ হল। দাম বলল, নয়শ টাকা। যাঁরা আমাকে ভালোবেসে দিয়েছেন, তাঁরা হয়তো হাজার টাকা বা বেশী দামিও দিয়েছেন। আমি নিজে কোনোদিন পাঁচশ টাকার বেশি দাম দিয়ে জামা কিনেছি বলে মনে পড়ে না। এত হাজার হাজার রেডিমেড জামা প্যান্টের জন্য বহু লোকের কর্মংস্থানের ব্যবস্থা তো হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির সিংহ ভাগ এই রেডিমেড গার্মেন্টস এর থেকে আসে শুনেছি। বিখ্যাত লেখকের লেখা পড়ে জেনেছি, আমেরিকার বিখ্যাত কাপড়ের দোকানের জামার ট্যাগে, “ মেড ইন বাংলাদেশ” লেখা দেখেছেন। ওরা যদি রপ্তানি করে, আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরাও নিশ্চয়ই করে। কিন্তু শুধু সেলাই মেশিন চালানোর বিরাট বিরাট কারখানার কথা আমি অন্তত শুনিনি। এ রাজ্যের হাজার হাজার শ্রমিক “ পরিযায়ী” হয়ে গোটা দেশে ছড়িয়ে আছে। এদের দিয়ে সেলাই করানো যাবে না? একটা খবর , একেবারে ভেতর থেকে বলতে পারি; অনেকেই হজম করতে পারবেন না। আমার এক নিকট আত্মীয়, ডেনমার্কের এক কোম্পানির টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর চাকরী করছে। বছর তিনেক হল বাংলাদেশে আছে। ওদের দেশের গণ জাগরণ বা সরকারের পরিবর্তনে , ঐ ডেনমার্কিয় কারখানায় কোন সমস্যা হয়নি। এটুকু বুঝেছি, আপনা ভালো পাগলেও বোঝে! 

অনেক তো শিবের গীত শোনালাম। কিন্তু এই মুস্তাফা দর্জির জন্য আমার এত দুর্বলতা কোথায়? আমার সেই ‘ প্রাক্তন বন্ধু ‘ লিখেছিল, “ দেশে কি আর ** দর্জি নেই!” তাঁর লেখা ঐ তারা চিহ্ন দেওয়া শব্দটি যে, কোন কোন সময় “ অশ্লীল” ভাবে ব্যবহার করা যায়, সম্ভবত সেই প্রথম বুঝেছিলাম। আমি ঐ শব্দটির দ্বিতীয় বার , অশ্লীল ভাবে প্রয়োগ করতে চাই না। কিন্তু আমার এই দর্জিকে এত পছন্দ কেন? আজই সকালে, বিখ্যাত বাগ্মী চন্দ্রিল বাবুর একটি পুরোনো বক্তৃতা, ইউটিউবে শুনছিলাম। ওনার মতে, বাঙালির সব থেকে বড় দুর্বলতা, বা ব্যর্থতার প্রধান কারণ, “ নিজের পেশার প্রতি নিষ্ঠার অভাব!” কয়েক কোটি বাঙালির মধ্যে , একটি রবীন্দ্রনাথ, একটি সত্যজিৎ বা একটি অমর্ত্য সেন! ব্যাস, তালিকা শেষ। এই ছিল , চন্দ্রিলবাবুর মূল প্রতিপাদ্য। আমি অনেক ভেবে দেখেছি, আমার এই মুস্তাফা দর্জি মানুষটিকে পছন্দের একটিই কারণ, ওনার কাজের প্রতি নিষ্ঠা। নিজের কাজটি একশ শতাংশ সততার সঙ্গে করেন। আমার মত প্রাচীনপন্থী লোকই নয়, আমার ছেলেও ওনাকে বেশ পছন্দ করে। ব্র্যান্ডেড পোশাকের সাথেই, ওনার তৈরী পোশাকও পরে। নানান কারণে ছেলে ঐ বছর ছয়েক হল , টিটাগরে ওনার দোকানে যেতে পারছে না। কিন্তু দর্জির প্রসঙ্গ উঠলেই বলে, হ্যাঁ, সবথেকে ভালো টিটাগড়ের মুস্তাফা দর্জি! 

মজার কথা কি জানেন? ভদ্রলোকের নাম কি আমরা কিন্তু জানিনা। ওনার দোকানের একটা নাম আছে, জানি, স্ট্যাটাস টেলার। কিন্তু ওনার নাম তাহলে মুস্তাফা দর্জি হল কি করে? সেই যে , “ মর্জিনা - আবদাল্লা “ গীতি নাটকে আছেন না, “ বা - বা মু - স্তা - ফা !”  যিনি মরা মানুষ বাঁচাতে পারেন না, “কিন্তু কাটা লাশ জোড়া দিতে পারেন!” 1.11.2024.

3

 

বদ রসিক

রসিকতা আর বদ রসিকতার মধ্যে সামান্যই ফারাক থাকে। আমার গ্রামের মদন দাদার কিছু রসিকতার কথা আপনাদের বলেছি। উনি সামান্য গ্রামের চাষি ছিলেন; কোনোদিন হাইস্কুলে পড়েছেন বলে শুনিনি। এবার আপনাদের এক উচ্চ শিক্ষিত মানুষের কিছু বদ রসিকতার কথা বলি। ডাক্তারী পরীক্ষা পাশ করার মাস তিনেকের মাথায় এক ডাক্তার দাদার সাথে আলাপ হল। উনি আমাদের কলেজ থেকে পাশ করেননি। আমাদের কলেজে চাকরী করতেন। তখনকার হিসেবে একটু দূরের জেলায় আমাকে নিয়ে গেলেন, একটা শিবিরে। ঐ জেলায় আমার মাসীর বাড়ী। এক রাত মাসির বাড়িতে থাকলাম। পরে দুই দিন দুই জায়গায় শিবির করে ফিরেছিলাম। আমরা একটা ট্রাকের মত বড় গাড়ীতে , পাঁচ ছয় জন গেছলাম। ফেরার সময় জেলা শহরে সি এম ও এইচ সাহেবের বাংলোয় তাঁর সাথে দেখা করতে ঢুকলাম। গাড়ী বড় রাস্তায় রেখে আমরা দুজনেই ঢুকেছিলাম। বাকিরা গাড়ীতে বসে থাকল। সি এম ও এইচ সাহেবের বাড়ীতে আমাদের চা খেতে দিয়েছিল। সাথে কিছু নিমকি আর নাড়ু। আমরা দুজন মিনিট পনের কুড়ি কথা বলে গাড়ীতে ফিরে এলাম। গাড়ীতে আমাদের সহযোগী একটি ছেলে ছিল; একে ঐ দাদা খুব বকাবকি করতেন, আবার স্নেহও করতেন। গাড়ীতে ফিরেই দাদা,  ওকে পকেট থেকে দুটি নাড়ু বের করে দিয়ে বললেন, নে, নাড়ু খা। আমি তো অবাক। কখন উনি নাড়ু পকেটে ঢুকিয়ে নিয়েছেন, আমি দেখিনি। উনি প্রায় প্রতি সপ্তাহেই কোথাও না কোথাও এরকম শিবিরে যেতেন। মাঝে মাঝে আমিও গিয়েছি। ওনার একটা সমস্যা ছিল, কোথাও সময় মত পৌঁছতে পারতেন না। আমাকে হয়তো বললেন, সকাল সাড়ে ছয়টায় গাড়ী রওনা দেবে; আমি সাড়ে ছয়টা থেকে হাজির। উনি একে ডাকছেন, ওকে কিছু একটা আনতে বলেছেন। এরকম করে বেলা দশটার পর স্যাররা এলে, তাঁদের বলতেন , স্যার বলতে ভুলে গেছি, আজ অমুক জায়গায় একটা শিবিরে যেতে হবে। স্যাররা কাজ সেরে সাড়ে এগারোটায় রওয়ানা দিতেন। অন্তত দুই জায়গায়, শিবির শেষ করে সন্ধ্যা সাতটায় দুপুরের খাবার খেতে হয়েছিল।

এই দাদার একটা শখ ছিল, মিথ্যা কথা বলে লোককে সেটা সত্যি ধরে নিতে বাধ্য করা। বাস্তবে ওনার চেহারা খুবই সাধারণ ছিল। উনি যে একজন উচ্চ শিক্ষিত ডাক্তার, বলে না দিলে বোঝা যাবে না। উনি নিজেই আমাকে গল্প শুনিয়েছেন; লোকাল ট্রেনে যাতায়াতের সময় , সুযোগ পেলেই কুলী মজুরদের সাথে বন্ধুত্ব করতে মজা পেতেন। একবার কয়েকজন রান্নার লোক , বড়বড় হাতা খুন্তি নিয়ে ট্রেনে চলেছিল। ভেন্ডার কামরায় মেঝেতে বসে, বিড়ি খেতে খেতে যাচ্ছিল ওরা। এই দাদাও ওদের সাথে মেঝেতে বসে বিড়ি খেতে শুরু করেন। নিজেকে চানাচুর কারখানার মজুর পরিচয় দিয়ে ওদের সাথে আলাপ জমান। চানাচুর কারখানার কাজ ছেড়ে ওদের মত বিয়ে বাড়ীতে রান্নার কাজ করতে চান, এরকম আলোচনা করতে করতে হাওড়া চলে আসেন। 

ওর পাল্লায় পড়ে একবার আমি খুব ফেঁসে গেছলাম। সকালে নটা নাগাদ হাসপাতালে কাজ করছিলাম। উনি আমাকে ধরে একটা শিবিরে নিয়ে গেলেন। শহর থেকে পঁচিশ তিরিশ মাইল মত দূরে একটা স্কুলে নিয়ে গেলেন। সেখানে আমাকে কাজে লাগিয়ে উনি আরও দূরের কোন শিবিরে চলে গেলেন। শীতকাল ছিল। আমি স্নান করে বেরইনি। ভাগ্যক্রমে ঐ স্কুলের বোর্ডিংয়ে আমার পরিচিত একটি ছেলেকে পেয়ে গেলাম। সে তার দাদা বা মামার কাছে একবার এসেছিল, আমাদের হোস্টেলে। ওর সাথে গিয়ে স্নান করে নিলাম। শিবিরের লোকেরা একটা রাস্তার পাশের ধাবায় নিয়ে গিয়ে তড়কা আর ভাত খাইয়ে দিল। ওরাও এক এক করে যে যার বাড়ী চলে গেল। প্রায় সূর্য ডোবার সময় হল। দাদার পাত্তা নেই। এমন সময় গ্রামের এক ভদ্রলোক মোপেড নিয়ে বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। আমাকে ওনার মোপেডে উঠিয়ে দেওয়া হল। তিন চার কিমি রাস্তা আসতে আসতে ওনার সাথে যেটুকু আলাপ হল। উনি বাজারে নামানোর পরে ওনার কাছে বাসের ভাড়ার জন্য তিন টাকা চেয়ে নিলাম। সন্ধ্যার পর হোস্টেলে ফিরলাম। পরদিন দাদা নির্বিকার। বললেন, ওদের তো তোকে পৌঁছে দেওয়ার কথা।

ওনার এই বদ রসিকতার জন্য একবার ওনাকে ছেলেদের হোস্টেলে ধরে এনে প্রচণ্ড রাগিং করা হয়েছিল। সে এক লম্বা কাহিনী। উনি কিন্তু ছোট বড় সবার সাথেই এরকম বদ রসিকতা করতেন। আমাদের বিভাগের চারজন স্যার একটি কোয়ার্টার নিয়ে মেস করে থাকতেন। একদিন সন্ধ্যায় এই দাদা ঐ চারজনকে নিজের কোয়ার্টারে খাওয়ার নিমন্ত্রন করলেন। ওনারা চারজন সন্ধ্যায় রান্নার মাসিকে আসতে বারণ করে দিলেন। ওনাদের কোয়ার্টার আর দাদার কোয়ার্টার দুটি আলাদা বিল্ডিং। পঞ্চাশ গজ মত দূর। রাত নটা নাগাদ স্যাররা এসে দেখেন দাদার কোয়ার্টার তালা বন্ধ। তখন তো মোবাইল ফোন ছিল না। দোকান থেকে কিছু আনতে গেছ ভেবে ওনারা চারজন কিছুক্ষণ বিল্ডিং এর নিচে ঘোরাঘুরি করে নিজেদের কোয়ার্টারে ফিরে গেলেন। রাত দশটায় এসেও দেখেন তালা বন্ধ। এবার ওনারা বিপদের গন্ধ পেলেন। সে সময় ওদিকে একটাই দোকান ছিল; রাত দশটায় বন্ধ হয়ে যায়। ওনারা তাড়াতাড়ি গিয়ে পাউরুটি কিনে কোয়ার্টারে ফিরে তাই খেয়ে রাতের খাওয়া সারলেন। কিন্তু একটা সন্দেহ থেকেই গেল। রাত এগারোটার পর দুজন এলেন দাদার খোঁজ নিতে। ওনারা যখন ফিরে যাচ্ছেন, দাদা তখন রিক্সা থেকে নামলেন। কোথায় ছিলে জিজ্ঞেশ করলে বললেন, সিনেমা দেখে ফিরলাম। কিন্তু এতো রাত্রে ওনারা কেন এসেছেন , জানতে চাইলেন। ওখন ওনারা দুজন বললেন, “ তুমি কি আজ রাতে আমাদের নিমন্ত্রণ করেছিলে?” দাদাতো আকাশ থেকে পড়লেন। তারপর ওনাদের হাতে পায়ে ধরে বোঝানোর চেষ্টা করলেন যে, একেবারেই ভুলে গেছেন। 

এরকম বদ রসিক মানুষ কিন্তু অনেক আছেন। এই দাদা আমাদের রাজ্যের মেডিক্যাল শিক্ষার সর্বোচ্চ মর্যাদার পদ থেকে অবসর নিয়েছেন। ঘুঘু তো বারে বারে ধান খেয়ে পার পেয়ে যায়। কিন্তু হোষ্টেলের ছাত্রেরা এদের কেমন শিক্ষা দিতে পারে, তাও আমরা দেখেছি।১৪.৪.২০২৫.

টেপিও দানা

আজ থেকে প্রায় পঞ্চান্ন বছর আগে একটি লেখা দেখেছিলাম। আমাদের গ্রামের মুদি দোকানে লেখা ছিল, “ এখানে টেপিও দানা পাওয়া যায়।” সেই সময় ওটা কি জিনিস, জানা হয়নি। অনেক পরে জেনেছিলাম, ঐ দানা হল, আমাদের পরিচিত সাবু দানা। তারপর বহু বছর কেটে গেছে। সেই বোঁচার দোকান নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে বোধহয় পঞ্চাশ বছর আগে। এক কাল বৈশাখী ঝড় এসে একদিন সেই মাটির বাড়ীর খড়ের চাল উড়িয়ে নিয়ে গেল। মাটির দেওয়াল কিছুদিন খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে ছিল। একদিন সকালে দেখলাম, জমির মালিক ঘোষ বাবুদের জন চার ভাই আর কয়েকজন মজুর এসে সাবল কোদাল দিয়ে সেই দেওয়াল ভেঙ্গে মাটিতে মিশিয়ে দিয়ে গেলেন। সেই প্রথম জানলাম, ঐ জমির মালিক আসলে ঘোষবাবুরা। ঐ দোকান লাগোয়া, হাসপতালের জমিতে একটা বিরাট ঝাঁকড়া তেতুঁল গাছের তলায় আমরা ছোট বেলায় গুল্লি খেলতাম। সেই তেঁতুল গাছ এখনও আছে। কিন্তু ডাল পালা অনেক কমে গেছে। বোঁচাদার দোকানের উঠানের কোনায় যে কয়েত বেল গাছ ছিল, সেটা কবে কাটা পড়ে, আজ আর মনে নেই। 

ভেজানো সাবু

তো সেই সাবু দানা কি করে টেপিও দানা বলে পরিচিতি পেয়েছিল, জেনেছি এই বছর খানেক আগে। একটা বিয়ে বাড়ীতে নিমন্ত্রন পেয়ে , কেরালা গেছলাম। কোঝিকোর  শহর থেকে গাড়ী করে একটু গ্রামের দিকে যাচ্ছিলাম। শহর ছাড়িয়ে মাইল তিনেক চলার পর , রাস্তার পাশের ফলের দোকানে একরকম কন্দ বিক্রী হচ্ছে দেখলাম। কোথাও কোথাও শুধুই ঐ জিনিস স্তূপাকার করে নিয়ে বসেছে। কন্দমূলগুলি কিছুটা রাঙা আলুর মত চেহারা। রং মেটে মেটে। আকারে বেশ বড়। আমার যে কুটুম্ব আমাকে গাড়ী চলিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তাঁকে জিজ্ঞেশ করলে বললেন, ট্যাপিওকা মূল। ডাক্তারী পড়ার সময় এই ট্যাপিয়োকা মূলের কথা একটু জেনেছিলাম। নরেশবাবু খুবই তাচ্ছিল্যের সাথে বলেছিলেন, ওগুলি এখনকার দেহাতি মজুর শ্রেণীর লোকেরা খায়। সস্তার খাদ্য। এখনও বোধহয় তিরিশ টাকা কেজি দামে পাওয়া যায়। সেদ্ধ করে একটু নুন লংকা বা আচার দিয়ে খাওয়া হয়। দুদিন পর, বিয়ে বাড়ীতে নানান খাদ্যের পাশে এই ট্যপিওকা সেদ্ধও রাখা ছিল। আপ্পাম এর মত দুই একটা দক্ষিণ ভারতের বিশেষ খাদ্য ছাড়া দামী ক্যটারারের যেমন হরেক রকম ব্যবস্থা থাকে সেসব তো ছিলই। ঐ ট্যাপিওকা সেদ্ধ আছে দেখে ইকটু খেয়ে দেখলাম। একটু হলদে আভা যুক্ত আলু সেদ্ধর মত। কোন স্বাদ গন্ধ নেই। আচার দিয়ে একটু খেয়ে দেখলাম। এই জিনিসের চিপসও আলুর চিপসের মত দোকানে বিক্রী করে। এই ট্যাপিওকা থেকেই যে আমার সেই সুদূর শৈশবের “ টেপিও দানা” তৈরী হয় জেনে গেলাম। কেরালার বিভিন্ন শহর থেকে অন্য শহরে গাড়ীতে যাওয়ার সময়, রাস্তার পাশে ট্যাপিওকা চাষ দেখেছি। গাড়ী থামিয়ে, নেমে দেখা হয়নি। গাছগুলি অনেকটা ঢেঁড়স গাছের মত দেখতে। পরে ইন্টারনেট খুঁজে দেখলাম, ঐ গাছের নিচে কেমন করে চার পাঁচটা কন্দ , মুলোর মত হয়। 

সাবুদানা আমি দু রকম ভাবে খেয়েছি। খুব ছোট বেলায় জ্বর হলে ভাত খেতে দেওয়া হত না। সাবু বা বার্লি ফুটিয়ে একটা ঘন স্যুপ মত করে খেতে দেওয়া হত। একটু চিনি দিয়ে বা কখনও লেবু দিয়ে খেতাম। একাদশী বা ঐ জাতীয় কোন পার্বণে মাকে দেখতাম, সাবু দানা ভিজিয়ে খেতে। ভেজানো সাবুর সাথে কলা আর একটু গুড় দিয়ে মেখে খাওয়া, বেশ একটা উপাদেয় খাদ্য ছিল। এরপর তো এল , সাবুর পাঁপড় । অতি বিশ্রী একটি খাদ্য। ডালের পাঁপড় যতটা সুখাদ্য, এই সাবুর পাপড় ঠিক ততোটাই অখাদ্য। সস্তার ক্যাটারার আজকাল আর ডালের পাঁপড় দেয় না। আজ সকালে অনেকদিন পর আবার সাবু দানা দিয়ে তৈরী একটা খাদ্য খেলাম। রাত্রে ভিজিয়ে রাখা সাবু দানা, নানা রকম অনুপান সহযোগে কড়াইতে সামান্য তেল দিয়ে ভেজে , খিঁচুড়ি । এটাকে অবশ্য সাবুর পোলাও বললেও ভুল হবে না।

সাবুর পোলাও

 এই যে সাবুদানার প্যাকেট কেনা হয়েছে, সেই প্যাকেটের গায়ে লেখা দেখলাম, “ Taipo pearls !” বিখ্যাত মশলা কোম্পানির প্যাকেট। লেখা আছে ১৯৫৭ সাল থেকে। অর্থাৎ আমার জন্মের তিন বছর আগে থেকেই এই কোম্পানী টেপিও দানা বিক্রী করছে। আহা, আমার জন্মের আগের একটা জিনিস। ভাবলেই তো রোমাঞ্চ লাগে। ৩১.৩.২৫.

 


মন্দির দর্শন

পঁয়ষট্টি বছর বয়স পর্যন্ত চাকরী করে গত বছর অবসর নিয়েছি। এই এক বছরে দেশের মধ্যে গোটা আটেক ট্যুর বা ভ্রমণ হল। এই বিশাল দেশে এরকম বেড়ানোর জায়গা কয়েক হাজার আছে। মোটামুটি প্রচলিত জায়গাগুলি দেখতে হলেও, আমার আরও বছর কুড়ি লাগবে। আর স্বাভাবিক নিয়মেই ঐ বয়স পর্যন্ত ঘুরে বেড়ানোর মত সুস্থ শরীর থাকার কথা নয়। তারপর তো কথা হচ্ছে, ঐ পঁচাশি বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচেই থাকবো না হয়তো। তাই , আপাতত বছরে আট দশবার ভ্রমণে বেরোব, এরকমই চিন্তা করে রেখেছি।

গত এক বছর তো শুধু নয়, আগেও বহু জায়গায় বেড়াতে গিয়েছি। বেড়ানোর জায়গা বললে, পাহাড়, সমূদ্র, জঙ্গল আর মন্দির এই চার রকমের বলা যায়। বাঙালির সহজ পাহাড় হল দার্জিলিং । সে তো অনেকদিন আগেই দেখেছি। এছাড়া সিকিমের পাহাড়ও ঘোরা হয়েছে। মধ্য ভারতের কিছু পাহাড় আর পশ্চিমঘাট পর্বতমালায় ঘুরেছি। আজ মনে হল, মন্দির কি কি দেখা হল তার একটা হিসেব করে দেখি।

আজন্ম দেখে আসছি আমাদের গ্রামের মন্দির। মেদিনীপুরের ত্রিলোচনপুর গ্রামের শীতলা মন্দির। প্রতিদিনই পূজা হয়। শনি মঙ্গলবার বড় তিথি। ছোটবেলায় দেখেছি, এক এক শনিবারে চার-ছয়টা পাঁঠা বলি হয়েছে। দোলের সাতদিনের মাথায় বিরাট উৎসব হয়।

 

ছোট বেলায় কলকাতায় বেড়াতে এসে মানিকতলার কাছে পরেশনাথের মন্দির দেখতে গেছলাম। গত কুড়ি পঁচিশ বছরের মধ্যে কাউকে আর সেই মন্দিরে বেড়াতে যেতে দেখিনি। কলেজে পড়ার সময় বাঁকুড়া থেকে বিষ্ণুপুর গিয়ে ওখানকার টেরাকোটার মন্দিরগুলি দেখেছি। জানতাম ওগুলি বেশ বিখ্যাত; কিন্তু আমার তেমন বিরাট কিছু মনে হয়নি। ওখানে কোন টেরাকোটার মন্দিরে কোন বিগ্রহ দেখিনি। কলেজ থেকে দিল্লিতে পরীক্ষা দিতে গিয়ে সেখান থেকে একবার হরিদ্বার হৃষিকেশ ঘুরে এসেছিলাম। ভোরবেলা হৃষিকেশ পৌঁছে একজন গাইডের পিছন পিছন ঘুরেছিলাম। সেরকম কোন মনে রাখার মতো মন্দির দেখিনি। গঙ্গা নদী আর তার উপরে লছমনঝুলা ব্রীজ কিছুটা দেখার মত মনে হয়েছিল। হরিদ্বারে কোন মন্দিরেই সেবার যাওয়া হয় নি। পরে একবার সপরিবারে হরিদ্বারে গিয়ে অনেক মন্দির আর আশ্রম দেখেছিলাম।

বাংলার এক বিখ্যাত শিব মন্দির দেখেছিলাম আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে। এক চোখের অপারেশন শিবিরে থেকে গেলাম দিন পাঁচেকের জন্য। বিকেলের দিকে তেমন কোন কাজ থাকত না। আর একটি ছেলে জুটে গেল। দু’জনে চলে গেলাম তারকেশ্বর মন্দির দেখতে। খুবই সাদামাটা একটি মন্দির। আমাদের গ্রামের মন্দির ওর থেকে বড় হবে। যাত্রী আমরা দুই জনই। সাধারণ একটি শিব লিংগ দেখে বিশেষ কিছু মনে হয়নি। ঐ রকম আর এক শিবিরে গিয়ে দেখলাম, নদিয়া জেলার শিবনিবাসের মন্দির। এত বড় শিবলিঙ্গ আর কোথাও দেখিনি।

সবাই পুরী যায়, জগন্নাথ মন্দির দেখতে। আমরাও সপরিবারে গেলাম একবার। সন্ধ্যা বেলা একজন লোক মন্দিরের গা বেয়ে উঠে, মন্দিরের চুড়ায় পতাকা পাল্টে দিল। তেমন দর্শক কিছু ছিল না। পরদিন সকালে পাণ্ডার সাথে পূজা দিতে গিয়ে দেখলাম, বেশ ভিড়। একদিন সকলে একটা গাড়ী নিয়ে চললাম ভুবনেশ্বর শহর দেখতে। সেখানে কালো পাথরের লিঙ্গরাজ মন্দির দেখলাম। তার অন্তত কুড়ি বছর পর আবার গেলাম ভুবনেশ্বর। সন্ধ্যাটা খালি ছিল। একটি সরকারী গাড়ী পেয়েছিলাম। সাথের ছেলেটি বলল, চলুন লিঙ্গরাজ মন্দির দেখে আসবেন। তাকে বললাম, ও মন্দির আমি দেখেছি, তার চেয়ে বরং চল অচ্যুত সামন্ত বাবুর ইউনিভার্সিটি দেখে আসি। যারা ভুবনেশ্বর যাবেন; সুযোগ পেলে এটি দেখে আসবেন।  সেবারই পুরী থেকে কোনারকে গিয়ে বিখ্যাত সূর্য মন্দির দেখেছিলাম।

 

বেশ প্রাচীন মন্দির, আর বেশ বড়। আর দেখেছিলাম একটি শ্বেত শুভ্র বুদ্ধ মন্দির; ধৌলাগিরি বা ধবল গিরি মন্দির।বিশাখাপত্তনম বেড়াতে গিয়ে শহরের বাইরে, পাহাড়ের উপর একটা বড় মন্দির দেখতে গেলাম। আগে ঐ মন্দিরের নাম শুনিনি। ওখানে গিয়ে জানলাম, সিমাচলম মন্দির। মন্দিরে ঢোকার স্টিলের বেড়া ইত্যাদী দেখে বুঝলাম, এক এক সময় বেশ ভিড় হয়। আমরা কিন্তু বেশ ফাঁকায় ফাঁকায় দেখে এলাম। অনেক বছর আগে দিল্লী বেড়াতে গিয়ে দেখেছিলাম, লোটাস টেম্পল। পরে কয়েকবার দিল্লি গেলেও মন্দির দেখার মত সময় ছিল না।

 

সাপের কামড় নিয়ে কাজ করা শুরু করার পর গোটা রাজ্যেই ঘুরে বেড়িয়েছি। কয়েকটা জেলায় গিয়ে সেখানকার বিখ্যাত মন্দিরও দেখেছি। প্রথমবার কুচবিহারে গিয়ে দেখলাম, মদনমোহন মন্দির। বেশ বিখ্যাত কিন্তু মন্দির তেমন দর্শনীয় নয়। ওখান থেকে আলিপুরদুয়ার যাওয়ার রাস্তায় পড়ে একটি বিখ্যাত শিব মন্দির; বানেশ্বরl নেমে মিনিট দশেক সময় থাকলাম। খুবই সাধারণ মন্দির। মন্দিরের পুকুরে বেশ কিছু বড় বড় কচ্ছপ আছে। লোকজন ঘাটের কাছে গেলে ওরা

 

এগিয়ে আসে। পরে একবার তুফানগঞ্জে গিয়ে একটি স্থানীয় ছেলের সাথে গেলাম, চেংমারী বর্ডার দেখতে। একজন সৈনিকের সাথে, কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে অন্য পারে গেলাম; এটাই বেশ রোমাঞ্চকর। বেড়ার ঐ পারে আছে একটি মনসা মন্দির; ওরা বলল, চাঁদ সওদাগরের  মন্দির। নতুন মন্দির, দেখলেই বুঝতে পারা যায়। পূজাপাঠ কিছু হয় বলে মনে হল না।

 

এই সাপের কামড় এর কাজ করতে গিয়েই দেখা হল, বর্ধমানের একশ আট শিব মন্দির। মন্দিরগুলি খুব একটা বড় নয়, কিন্তু একটা বড় ঝিলের চার পাড়ে সুন্দর করে সাজানো। এখনও সবকটি মন্দিরে পূজা হয়।

 

এছাড়া বর্ধমান শহরের মধ্যে বুড়ো শিবের মন্দির আছে। আর বোধহয় একটি সর্বমঙ্গলা মন্দিরও দেখেছি। এরকম একশ আট বা ঐ রকম অনেক অনেক শিবের মন্দির আছে বর্ধমানের কালনায়। সাপের ক্লাশ নিতে কালনা গেলেও সেই সব মন্দির দেখা হয়নি। কাটোয়া শহরেও বার দুই যেতে হয়েছে , এরকম সাপের কামড় এর ক্লাশ নিতে। একবার একদল শিক্ষকের সাথে গেলাম , কাটোয়া থেকে একটু ভেতরে সিঙ্গি গ্রামে। এই গ্রামে জন্মেছিলেন কবি কাশীরাম দাস। একটি সাধারণ আবক্ষ মূর্তি ছাড়া আর কিছু নেই। ওর পাশের গ্রাম শ্রীপুরে বেশ কয়েকটি পুরনো মন্দির আছে। মন্দিরের গায়ের টেরাকোটার কাজ এখনও দেখা যায়। এই বাংলার মন্দিরের শহর বলা যায় নবদ্বীপকে। অনেক ছোট ছোট মন্দির, তার থেকেও বেশি আশ্রম আছে। স্টেশনে নেমে একটা রিক্সা নিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখেছিলাম, অনেক মঠ মন্দির।  নৌকায় গঙ্গা পেরিয়ে অন্য পারে মায়াপুর। এখানে তো অসংখ্য মন্দির। সবথেকে বিখ্যাত ইসকনের চন্দ্রোদয় মন্দির। এই মন্দিরটি কিন্তু একটি একতলা নাট মন্দির মত ছিল। সে  সময় ওখানে সবথেকে বড় মন্দির ছিল প্রভুপাদ সমাধী মন্দির। পরে একটি বিশাল বড় মন্দির তৈরি হচ্ছে দেখেছিলাম; এখনও নির্মাণ সম্পূর্ন হয়েছে কি না জানি না।  

 

নবদ্বীপের কয়েক ষ্টেশন পরে পূর্বস্থলী। ওখানে নেমে অটো রিক্সা নিয়ে চুপী গেলাম। চুপিতে নৌকা করে মজা ভাগীরথীর খাঁড়িতে ঘুরলাম। দুপুরে স্টেশনের অন্য পারে নিয়ে গেল টোটো। বেশ কিছুটা বাগান গাছপালার ভেতর দিয়ে গিয়ে পৌঁছলাম একটি আশ্রমের গেটে। নাম দেখলাম, কপিল কুটির। বেশ বড় আশ্রম।

 

পরে ইউটিউবে এরকম বহু মঠ আশ্রমের খবর দেখেছি; কোথাও যাওয়া হয়নি।

অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় মশাইয়ের উপন্যাস পড়ে জেনেছিলাম, বহরমপুরে শহরের একটু বাইরে একটি বিখ্যাত কালী মন্দির আছে। পরে ওখানকার এক পরিচিত ডাক্তারের কাছে জানলাম, ওটার নাম বিষ্ণুপুর কালীবাড়ি। নরেন ক্ষ্যাপা নামের এক বড় সাধক ওখানে থাকতেন। এক ডাক্তার দাদার গাড়ী করে গিয়ে একবার দেখে এলাম।

 

সাপের কামড় এর কাজ করতেই প্রথম আসামে গেলাম। দুপুরে কাজ সেরে গৌহাটি এয়ারপোর্টে ফেরার রাস্তায় দেখে এলাম বিখ্যাত কামাখ্যা মন্দির। সেদিন মন্দির চত্বরে দুই চারজনের বেশী লোক দেখিনি। কিন্তু কয়েক বছর পর একটি বড় দলের সাথে গিয়ে দেখি বিশাল ভিড়। আমাদের দলের সকলে ভোরে লাইনে দাঁড়িয়ে বিকেলের পরে পূজা দিয়ে ফিরেছিল। আমি লাইন ছেড়ে একা একাই ভুবনেশ্বরী মন্দির আর উমানন্দ দেখে এসেছি। এবারই সন্ধ্যায় বশিষ্ঠ আশ্রম আর দুই একটা নতুন মন্দিরও দেখেছিলাম।

 

ঐ দলের সাথেই কাজিরাঙ্গা যাওয়ার সময় মাঝপথে একটা বিশাল শিব লিঙ্গের মত দেখতে মন্দির দেখে গেলাম। নাম বলল, মহা মৃত্যুঞ্জয় jমন্দির। শিলং শহরের যে পাড়ায় আমরা দুই রাত ছিলাম, সেখানেও একটা কালী মন্দির ছিল।

সাপের কামড় নিয়ে একটা কর্মশালায় যোগ দিতে ভেলোরের বিখ্যাত মেডিক্যাল কলেজে গেলাম। ওদের কলেজ থেকে হাস্পাতাল পাঁচ কিমি মত দূরে। এক বিকেলে আমরা পাঁচজন একটা গাড়ী নিয়ে ওদের হাস্পাতাল দেখতে চললাম। গাড়ীতে উঠে একজন বললেন, ভেলোরের স্বর্ণ মন্দির বিখ্যাত, চলুন ওটা দেখে যাই। দুপুর তিনটে নাগাদ পৌঁছলাম। মাথাপিছু আড়াইশ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ভেতরে ঢুকলাম। একটা বিশাল বড় প্রান্তরের চারদিকে প্রায় এক কিমি হেঁটে মন্দিরের সামনে পৌঁছলাম। পিতলের বিষ্ণু মূর্তি মনে হল। কিন্তু বেরোনোর রাস্তার পাশে একজন সৌম্য দর্শন মনুষের ছবি বিক্রী হচ্ছে দেখলাম। পুরুষ মানুষ, কিন্তু কি যেন একটা আম্মা বলে নাম, এটুকু মনে আছে।

প্রথমবার মধ্যপ্রদেশ বেড়াতে গিয়ে জব্বলপুরকে কেন্দ্র করে ঘুরেছিলাম। ওখানকার নর্মদা নদীর ধুঁয়াধারা জলপ্রপাত দেখতে যাওয়ার সময় আমাদের ড্রাইভার বড় রাস্তা ছেড়ে ছোলা গমের মাঠের মাঝখান দিয়ে একটা কাঁচা রাস্তা দিয়ে কয়েক কিমি ঢুকে একটি দেবী মন্দিরে নিয়ে গেল। সাধারণ মন্দির, কিন্তু বেড়ার গায়ে গায়ে হাজার হাজার নারকেল বাঁধা অবস্থায় আছে দেখেছিলাম।

 

জলপ্রপাত দেখে বিখ্যাত মার্বেল রকের দিকে যাওয়ার সময় একটা টিলার নিচে থেকে ড্রাইভার বলল, উপরে চৌষট্টি যোগিনী মন্দির আছে, উঠে দেখে আসতে পার। আমরা উঠিনি। জব্বলপুর থেকে বান্ধবগড় দেখে আমরা চলে গেছলাম, অমরকণ্টক । অমরকণ্টক এর নর্মদা উদগম মন্দির দেখলাম। মন্দিরের থেকে একশ মিটার দূরে কর্ন মন্দির। লাল রঙের বেশ পুরনো কয়েকটা মন্দির। এখন খুব যত্নে বাগান দিয়ে সাজানো। তপোভূমি নর্মদা বইতে ঘোষাল মশাই লিখেছেন, সে সময় ঐ মন্দির জঙ্গলে ঘেরা ছিল।

 

এ ছাড়া পাহাড়ের একেবারে মাথায় দেখলাম একটি বিশাল জৈন মন্দির। বিশাল মার্বেল পাথরের তৈরি মন্দিরটি তখনও অসম্পূর্ণ। ফেরার পথে আমাদের গাড়ী আরও গোটা দুই শিব মন্দির ঘুরিয়ে পেনড্রা রোড স্টেশনে পৌঁছে দিয়েছিল। ঐ শিব মন্দির দুটির একটিতে প্রায় বারো ফুট উচু শিব লিঙ্গের মাথায় জল দেওয়ার জন্য সিঁড়ি করা আছে।  ছবি খুঁজে বের করতে গিয়ে দেখি এই শিবের নাম , মহাকালেশ্বর। এই ক’মাস আগে উজ্জয়নি বেড়াতে গিয়ে জানলাম, সেখানকার বিখ্যাত শিবের নাম , 

উজ্জয়িনী তো শুধুই মন্দিরে ঠাসা। একটা আটো নিয়ে এক বেলা ঘুরে ঘুরে পাঁচ সাতটা মন্দির দেখলাম। উজ্জয়িনী, ইন্দোর , ওমকারেশ্বর আর প্রয়াগরাজ ভ্রমণের কথা আগে বিস্তৃত লিখেছি। ইন্দোর শহরের মধ্যে বিরাট অন্নপূর্ণা মন্দির দেখলেও জৈনদের কাঁচ মন্দির খোলা পাইনি। ওমকারেশর এর দুটি বিখ্যাত শিব মন্দির তো দেখলাম। পরদিন সকালে দ্বীপ পরিক্রমা করতে করতে আরও গোটা চার -পাঁচ মন্দির দেখলাম, বাইরে থেকে; সবকটি মন্দিরে ঢুকে দেখা হল না। মহেশ্বরে রাণী অহল্যা বাই এর নিজের পূজার ঘর দেখলাম। সেখানে সোনার সিংহাসনে শিব লিংগ।

 

এছাড়া দুর্গের মধ্যে বিরাট শিব মন্দির ছাড়াও আরও দুটি মন্দির দেখেছি। আমরা যখন প্রয়াগরাজ হয়ে ফিরি সেই সময় সরকারী ভাবে কুম্ভ মেলা শুরু হয়েছে। তার দিন সাতেক আগে প্রধান মন্ত্রী মেলার উদ্বোধন করে গেছেন। আমাদের অবশ্য মেলা নিয়ে সেরকম উৎসাহ ছিল না। আমরা এলাহাবাদ শহরটি ঘুরে দেখতে চেয়েছিলাম। স্টেশন থেকে একটি গাড়ী নিয়ে, শহর দেখতে চাই বলেছিলাম। প্রথমেই আমাদের নিয়ে গেল হনুমান মন্দিরে। বিরাট চত্বরের মধ্যে মন্দির। মন্দির বললে আমরা যেমন বুঝি সেরকম দেখতে নয়। বিশাল নাট মন্দিরের মত। সেখান থেকে গেলাম ভরদ্বাজ আশ্রম। পুরনো আশ্রমের কোন চিহ্নই নেই; শহরের মধ্যে ঝকঝকে মার্বেল পাথরের কয়েকটা ছোট ছোট মন্দির। শহরের মধ্যে সতী মন্দিরটি কিছুটা পুরনো মনে হল। সঙ্গমে স্নান করে ফেরার সময় “ শোয়ানো হনুমানের মন্দির” দেখার কথা ছিল; রাস্তা বন্ধ থাকায় দেখা হয়নি।

২০২৪ সালেই একবার বেরিয়ে নৈনিতালের দিকে কয়েকটা জায়গা ঘুরে এলাম। জুন মাসের মাঝামাঝি ওদিকে প্রচণ্ড গরম থাকে, জানা ছিল না। ভীম তাল থেকে রানিক্ষেতের দিকে যাওয়ার পথে পড়ে ওদিককার বিখ্যাত নিব করোরি বাবার কাঁইচি ধাম। ঐ সময় মেলা চলছিল। আমরা জ্যামে আটকা পড়ে গেলাম। তিন চার কিমি রাস্তা পেরোতে ঘণ্টা দুই লাগল। ভিড় দেখে আর আশ্রমে ঢোকার চেষ্টা করলাম না। রানিক্ষেতে পৌঁছে প্রথমে গেলাম , ঝুলা দেবী মন্দিরে। মন্দির সাধারণ। সেরকম যাত্রী ও ছিল না। যেটা দেখার মত সেটা হল, বেড়ার গায়ে গায়ে হাজার হাজার পিতলের ঘণ্টা ঝোলানো।

 

দুদিন পর এর প্রায় দশগুণ ঘণ্টা দেখলাম, চিতোই গোলু দেবতার মন্দিরে। রাণীক্ষেতে আরও গোটা দুই ছোট ছোট মন্দির দেখেছি। এই চিতোই গোলু দেবতা ঠিক কোন ঠাকুর বোঝা গেল না। খুবই সাধারণ একটি মন্দির। কিন্তু গোটা চত্ত্বর জুড়ে লাখ খানেক ঘন্টা ঝুলছে। ঘন্টার সাথে নিজের নিজের মনোবাসনা লিখে একটি করে চিরকুট। মন্দিরে ঢোকার আগেই রাস্তার পাশে ডালার দোকানের মত শুধুই ঘণ্টা বিক্রীর দোকান। বিনসার থেকে কাসার দেবী আসার রাস্তায় আর একটি গোলু দেবতার মন্দিরে ঢুকে দেখে এলাম। যাত্রী প্রায় নেই।

 

কাসার দেবী খুব বিখ্যাত জায়গা। একটি ছোট পাহাড়ের উপর ছোট্ট মন্দির। মূর্তি বেশ ছোট। মন্দিরও বেশ ছোট। ঐ পাহাড়ের নাকি বিরাট কি সব মাহাত্ম আছে। কি সব মহাজাগতিক রশ্মির সমাবেশ হয় ওখানে। ঐ পাহাড়ের উপরে একটি ছোট্ট খোঁদলের মত গুহায় বসে স্বামী বিবেকানন্দ ধ্যান করেছিলেন। বাঙালি ছাড়া আর কেউ ওদিক দেখতে যায় বলে মনে হল না। ঐ পাহাড়ের উপর একটি সারদা মঠ আর একটি বৌদ্ধ মনাস্ট্রিও দেখলাম। নৈনিতালের লেকের পাড়ে নয়না দেবী মন্দিরে সবাই পূজা দিচ্ছে দেখলাম। পরদিন সকালে ঘুরতে বেরিয়ে গুরুদ্বোয়ারায় ঢুকলাম। ওখানে ঢোকার সময় মাথায় একটি ফেটটি বেঁধে ঢুকতে হল। এটাই আমাদের প্রথম শিখ ধর্মের মন্দিরে ঢোকার অভিজ্ঞতা। আর মুসলিম মাজারে ঢুকেছিলাম, মুম্বই এর হাজী আলী দরগায়। সমুদ্রের মাঝে সমাধী মন্দির।

পাহাড়ের এক বিখ্যাত সমাধী মন্দির আছে সিকিমে। সে হল বাবা মন্দির। প্রয়াত সৈনিক বাবা হরভজন সিং এর স্মৃতি মন্দিরে ঢুকে দেখে এসেছি। সেদিন বরফ ছিল না, কিন্তু রাস্তা কালো মেঘে ঢেকে গেল। আমার জীবনের সবথেকে পুরনো যে সমাধী মন্দির দেখার কথা মনে পড়ে সেটা আমাদের গ্রামের বাড়ীর পুরোহিত চন্ডি বাবুর সমাধী। ওনাকে আমি চোখে দেখিনি। ওনার সেই ছোট্ট সমাধী মন্দির আমাদের স্কুলে যাওয়ার পথের পাশে দেখতাম। সিমেন্টের সেই মন্দির কি করে একেবারে উধাও হয়ে গেছে জানিনা। শেষ বোধহয় দেখেছি পঞ্চাশ বছর আগে।

 

এই মাস দুই আগেই ঘুরে এলাম দক্ষিণ ভারতের কয়েকটা বিখ্যাত জায়গা। তার ভ্রমণ বৃত্তান্ত আগেই লিখেছি। একবছর আগে আর একবার কোঝিকোর  শহরে গেছলাম। সেবারও শুনিনি যে ঐ শহরে থালি মন্দির নামে একটি বিখ্যাত মন্দির আছে। ওখান থেকে একদিনেই গিয়ে দেখে আসা যায় বিখ্যাত গুরুভায়ুর মন্দির। কিন্তু মন্দির দেখার আগ্রহ ছিল না। একইভাবে সেবার ত্রীবান্দ্রম হয়ে ফিরলেও ঐ শহরের অতি বিখ্যাত পদ্মনাভস্বামী মন্দির দেখার কোন উৎসাহ ছিল না। এবার হঠাৎ করেই, সকালে হাঁটতে বেরিয়ে থালি মন্দির দেখে এলাম। মন্দিরের ভেতরে ঢুকে দেখা বা পূজা দেওয়ায় চেষ্টা করিনি। কন্যকুমারী তো লোকে যায় বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়াল দেখতে। আমরাও তাই করলাম। ঐ একই জায়গায় দেবীপাদ মন্দির নামে একটি মন্দির আছে; উঁকি দিয়ে দেখলাম। পরদিন সকালে একটা গাড়ী নিয়ে কন্যাকুমারী ঘুরে নাগের কোয়েল স্টেষণে ফিরলাম। কন্যাকুমারীতেই অন্তত পাঁচটি সুন্দর মন্দির দেখলাম। ফেরার পথে সূচীন্দ্রম মন্দির দেখে নিলাম। এই সুচিন্দ্রম মন্দিরের গোপূরমেই নাকি সবথেকে বেশী মূর্তি আছে।

 

মাদুরাই এর মীনাক্ষী মন্দিরের চারটি গোপুরম পৃথিবী বিখ্যাত। আমরা যখন গেলাম সে সময় ওগুলি চট দিয়ে ঘেরা, মেরামতির কাজ চলছে। ওখান থেকে মাইল দশেক দূরে আলাগিরী পাহাড়ে গোটা তিনেক মন্দির দেখে এলাম। রামেশ্বরম মন্দিরের ভেতরে ঢুকে, বিখ্যাত করিডোরের ছবিও তুলেছি। কিন্তু ওখানকার বাইশ কুন্ডের জলে স্নান করতে যাই নি। আটো নিয়ে ধনুষ্কোডির দিকে যেতে বিভিশনের মন্দির দেখলাম। রামেশ্বরমে গোটা তিনেক কুণ্ড নামের ডোবা পুকুর দেখলাম ।

আর যে দুটি বিখ্যাত মন্দিরে বাঙালি মাত্রই একবার যাবেই তাদের কথা বলে শেষ করা যাক। গয়া গিয়ে পিতৃপুরুষের পিণ্ড দেওয়া হিন্দুদের পবিত্র কর্তব্য। আমিও দাদাদের সাথে গেলাম। গোটা গয়া শহরটাই অত্যন্ত নোংরা। দেখেই একটা অশ্রদ্ধা হয়ে গেল। ওখানকার বিষ্ণু মন্দির কেমন দেখেছিলাম, একটুও মনে নেই। ওখান থেকে একটা বড় আটো নিয়ে বুদ্ধ গয়া দেখতে গেছলাম। বুদ্ধ গয়া বেশ পরিস্কার সুন্দর জায়গা। বৌদ্ধ মন্দির আর বুদ্ধ মূর্তি বেশ সুন্দর। পাশের রাজ্য ঝাড়খণ্ডের রাজধানী রাঁচির আশেপাশে বেশ কয়েকটি বড় জলপ্রপাত আছে। আমরাও ঐ জলপ্রপাত দেখতেই গেছলাম। ওদিকের কোন একটা বিখ্যাত দেবী মন্দির লোকে দেখতে যায়। রাজারাপ্পার সেই মন্দির আমাদের দেখা হয়নি। আমাদের ড্রাইভার আমাদের নিয়ে চলল শহরের দক্ষিণ প্রান্তের জগন্নাথ মন্দির দেখাতে। একটা ছোট্ট টিলার উপর এই মন্দির। নতুন হয়েছে। মন্দিরের থেকেও দূরে , নীচে শহরটা দেখতে বেশি সুন্দর লাগে।

সিকিম বেড়াতে গেলে কিছু বৌদ্ধ মোনাষ্ট্রী দেখা হয় ; আমরাও দেখেছি।একটি মোনাষ্ট্রীতে অনেক লামা দেখেছি। কিন্তু দার্জিলিঙের রিশিহাটে যে ফার্মস্টেতে ছিলাম তার অনেকটা উপরে পাহাড়ের মাথায় একটি মনাষ্ট্রী আছে। উঠে দেখে এলাম। কিন্তু কোন মানুষজন দেখলাম না। দার্জিলিং এর ম্যাল থেকে একশ সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলে একটা মন্দির আছে; শিব মন্দির বোধহয়। আমরা বছর কুড়ি আগে একবার দেখেছি। পশ্চিম সিকিমের নামচি বাজারের কাছে একটা চারধাম তৈরী হচ্ছিল, সে বোধহয় বছর পনের কুড়ি আগে। এতদিনে নিশ্চয়ই পুরো তৈরী হয়ে গেছে।বেনারসে আমি যখন গেছলাম তখনও বিখ্যাত বিশ্বনাথের গলি ছিল। আজকের মত ঝকঝকে করিডোর হয়নি তখনও। বিশ্বনাথ আর অন্নপূর্ণা মন্দির দেখলাম। ঐ গলির প্রসঙ্গ এলেই আমার এক ডাক্তার দাদার কথা মনে আসবেই। সে এক আলাদা গল্প। এই দাদা অন্নপূর্ণা মন্দির এর সামনের রাস্তায়, অলৌকিক ভাবে , মা অন্নপূর্ণার প্রাসাদ পেয়েছিলেন। সেবারই সারনাথের বৌদ্ধ বিহার, স্তূপ ইত্যাদী দেখতে গিয়ে অনেক বিদেশী বৌদ্ধ তীর্থ যাত্রী দেখেছিলাম।

 

 

জম্মু কাশ্মীরের বিখ্যাত বৈষ্ণদেবী মন্দিরে আমরা যাওয়ার চেষ্টা করিনি। কাটরা ষ্টেশন হয়ে ফেরার সময় দেখেছি, শত শত যাত্রী খোঁড়াতে খোঁড়াতে ট্রেনের জন্য চলেছে। এত কষ্ট করে পূণ্য অর্জন করতে পারবো না। আর এই জন্যই তিরুপতি দর্শন করার ইচ্ছাই হয়নি। গুলমার্গে ছোট্ট টিলার উপর একটি কাঠের শিব মন্দির আছে। ওটি একবার পুড়ে গেছল। কোন এক হিন্দি সিনেমার গান ওখানে শ্যুটিং হয়েছিল, তাই খুব বিখ্যাত। দূর থেকে দেখলাম। শ্রীনগরে একটি পাহাড়ের উপর একটি শিব মন্দির দেখতে সবাই যায়, আমরাও গেলাম। চার পাঁচশ সিঁড়ি দিয়ে উঠতে হয়।

 

গোটা দেশ ঘুরে ঘুরে অনেক বিখ্যাত অখ্যাত মন্দির দেখা হল। এবার বাড়ীর কাছে ফিরে আসি। বছর কুড়ি আগে একবার হলদিয়া ঘুরতে গেছলাম। ফেরার পথে মহিষাদল রাজবাড়ীর পুরনো মন্দির দেখেছিলাম। আর দেখেছিলাম তমলুকের বিখ্যাত বর্গভীমা মন্দির।এই বরগভীমা একটি সতী পীঠ। এ রাজ্যের সবথেকে বিখ্যাত সতী পীঠ হল তারাপীঠ। প্রায় তিরিশ বছর আগে একবার গেছলাম; পূজা দিয়েছিলাম কি না মনে নেই। ঠিক করোনা অতিমারী শুরুর আগে  একবার মুর্শিদাবাদ বেড়াতে গেছলাম। সেবার হাজার দুয়ারী না দেখে অন্য পারে চলে গেছলাম। ঐ পারে আর এক সতী পীঠ, নলাটেশ্বরি মন্দির দেখলাম। ওদিকেই আছে আমাদের গৃহ দেবতা প্রভু জগদ্বন্ধু আশ্রম , ডাহাপাড়া ধাম।

 

বছর কুড়ি আগে একবার সাগরদ্বীপ দেখতে গেছলাম। না, মেলার ভিড়ে যাওয়ার সাহস হয়নি। অন্য সময় দেখে বোঝা মুস্কিল যে মেলার সময় ওখানে কি ভয়ংকর ভিড় হয়। আমরা ওখানে কপিল মুনীর মন্দির দেখেছি। এখন শুনছি সমুদ্র এগিয়ে আসছে। কয়েক বছর পর হয়তো এই মন্দির আর থাকবে না।

মেদিনীপুর শহরে থাকার সময় একবার গেছলাম, কর্নগড়ের মহামায়া মন্দিরে পূজা দিতে। মেদিনীপুরের জগন্নাথ মন্দির বেশ পুরোনো, দেখেছি কয়েকবার ; ভেতরে ঢোকা হয়নি। মেদিনীপুর শহরে কেন্দ্রে বটতলা চকের কালী মন্দির বেশ বিখ্যাত। এছাড়া হবিবপুরের সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরও বেশ বিখ্যাত। উত্তর দিনাজপুর জেলায় চাকরী করার সময় খুব শুনতাম পতিরামের বোল্লা কালী মন্দিরে কথা। কালী পূজার রাত্রে হাজার খানেক বলী হয় শুনেছি। কোনদিন দেখার ইচ্ছাই হয়নি। প্রথম যেদিন ইটাহার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রাত্রে ছিলাম, সেই রাত্রেই ছিল কালী পূজা। ভোর থেকে দেখলাম স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাঠ পেরিয়ে লোকে চলেছে, খড়ের খাঁচায় বলি দেওয়া পায়রা নিয়ে। রাস্তার অন্য পারে কালী মন্দির দেখতে গেলাম। তখন বলী শেষ হয়েছে। মন্দিরের উঠান রক্তে লাল।

 

আমার বর্তমান জেলা উত্তর ২৪ পরগনায় আছে বিখ্যাত লোকনাথ বাবার মন্দির। বাড়ীর কাছের দুটি বিখ্যাত মন্দির কয়েকবারই দেখেছি। দক্ষিণেশ্বর আর বেলুড়ের মন্দির। কলকাতার ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি রাস্তা থেকেই দেখা যায়; সেই এগারো বারো ক্লাশে পড়ার সময়  ঐ রাস্তা দিয়ে স্কুলে যেতাম। বালিগঞ্জে একটি বিরাট মিন্দির একবার দেখতে ঢুকেছিলাম; কি দেবতার মন্দির মনে নেই। আর কলকাতার মন্দির বললে যে কালী মন্দির বোঝায় সেটা আমার দেখা হয়নি। এখন তো আর ঐ জায়গার সেই স্থান মাহাত্ম নেই। উল্টে ঐ নামটা শুনলে কেমন এক বিতৃষ্ণা হয়। Iআমার বাড়ির থেকে হাঁটা দুরত্বে দমদমের হনুমান মন্দির; কোনোদিন ভেতরে ঢুকে দেখা হয়নি। আর এখন আমার বাড়ীর ঠিকানা বোঝাতে লোককে বলি, বড় কালী বাড়ীর কাছে। একবার একটা গাড়ী নিয়ে চাকলা আর কচুয়া ধাম ঘুরে এলাম। ঐ দিনই যাওয়ার পথে দেখে গেলাম নীলগঞ্জের নন্দদুলাল মন্দির। এই মন্দিরের কাঁঠাল প্রাসাদ নাকি কোন কোন বড় অসুখ সারিয়ে দেয়। ব্যারাকপুরের বি এন বোস হাসপাতালের কাছেই , গঙ্গার ধারে আছে, অন্নপূর্ণা মন্দির; অনেকটা দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের মত। কিন্তু বেশ অযত্নে আছে। বারাকপুর স্টেশনের হনুমান মন্দিরে বেশ যাত্রী হয় দেখেছি।

চাকলা ধামএরকম মাহাত্ম্য প্রায় সব কটি মন্দিরেরই কিছু না কিছু আছে। আমরা কোন মন্দিরেই কোন অলৌকিক দেখতে যাইনি। মন্দিরের ভাস্কর্য দেখতেই মূলত যাওয়া। অনেক বিখ্যাত মন্দিরেই দেখার মত তেমন বিগ্রহ নেই। এ দেশে ভ্রমণে বের হতে হলে যে দুটি রাজ্য অবশ্যই দেখতে চায় সকলে সেগুলি হল , কাশ্মীর আর আন্দামান। কাশ্মীরে একটি মন্দিরে ঢুকেছি। আন্দামানের যে মন্দির সকল ভারতবাসীর কাছে পবিত্রতম সেটা হল আমাদের মুক্তির মন্দির, সেলুলার জেল। ওটা দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে।

 

৮.৪.২০২৫.


2024 সালের ভ্রমণ কাহিনীগুলি
Download File
বিবিধ নিবন্ধ
Download File