দয়াল বন্ধু- চোখের ডাক্তার থেকে সাপের ডাক্তার
১৯৮৪ সাল থেকে চোখের ডাক্তার , দয়াল বন্ধু মজুমদার , ২০০৭ সালের পর থেকে একটু একটু করে সাপের কামড় -এর ডাক্তার হয়ে যাওয়ার ইতিহাস।
সাপের কামড় ও দয়াল বন্ধু
মেদিনীপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে ডা দয়াল বন্ধু মজুমদার, ২০১৫ সালে দিল্লিতে ডাক পেলেন, জাতীয় চিকিৎসা বিধি -২০১৬ ( সাপের কামড়) তৈরীর বিশেষ কমিটিতে। বাড়ীতে বসে কম্পিউটারে প্রায় একশ ঘন্টা লেখালেখি করে, দিল্লিতে তিনবার সশরীরে উপস্থিত থেকে, ডা দয়াল বন্ধু এই জাতীয় চিকিৎসা বিধি তৈরীতে দায়িত্ব পালন করেন।
২০১২ সাল থেকেই, পশ্চিম বাংলার নিজস্ব সর্প দংশন চিকিৎসা বিধি প্রস্তুত কমিটির সদস্য। সেই ২০১২ সালের চিকিৎসা বিধি, সামান্য পরিমার্জন করে, এখনও এ রাজ্যের সরকারী নির্দেশক ( Treatment Protocol) হিসেবে চলছে। সেই ২০১২ সাল থেকে এখনও ডা দয়াল বন্ধু এই রাজ্যের সরকারী প্রশিক্ষক দলের একজন। মাঝে মাঝেই অন্য রাজ্যের সরকারী চিকিৎসা প্রশিক্ষণের জন্য আমন্ত্রণ পাচ্ছেন। ওড়িশা রাজ্যের দুটি জেলার চিকিৎসকদের সাপের কামড় এর চিকিৎসা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এ ছাড়া, অসম, উওর প্রদেশে, এবং আন্দামানেও সাপের কামড় এর কর্মশালায় অংশ নিতে আমন্ত্রিত হয়েছেন। তাছাড়া বেশ কয়েকটি সর্বভারতীয় কর্মশালায়, অনলাইনে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।
মজার ব্যাপার হল, এই ডা দয়াল বন্ধু কিন্তু একজন চোখের ডাক্তার। কি করে একজন চোখের ডাক্তার, প্রায় পঁচিশ বছর চোখের ডাক্তারী করার পর, একেবারে সর্ব ভারতীয় স্তরের সাপের কামড় এর প্রশিক্ষক হয়ে গেলেন? এই জন্য দয়াল বন্ধু মজুমদার এর জীবন কাহিনী প্রথম থেকে শুনতে হবে।
১৯৬০ সালে, তৎকালীন যুক্ত মেদিনীপুরের, ডেবরা থানার, সিজগেরিয়া গ্রামে জন্ম ডা দয়াল বন্ধুর। এই গ্রামটি মেদিনীপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ৫৫ কিমি দূরে। বম্বে রোডের আশাড়িবাঁধ থেকে উত্তর দিকে যে রাস্তা লোয়াদার দিকে গিয়েছে, সেই রাস্তা ধরে, লোয়াদায় কংসাবতী নদী পেরিয়ে আরও প্রায় আট কিমি দূরে এই গ্রাম। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত লোয়াদার নদীর ওপারে পাকা রাস্তা ছিল না। বাস চলত না। বর্ষাকালে জুতো জামা প্যান্ট ব্যাগে নিয়ে, কাদা রাস্তা দিয়ে হেঁটে লোয়াদায় নদী পেরিয়ে, জামা জুতো পরে বাসে উঠতে হত।
গ্রামে একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তার বাবু থাকলেও, রুগী ভর্তির ব্যবস্থা ছিল না। স্বাভাবিক ভাবেই সাপের কামড় এর মত রুগী ভর্তি করে চিকিৎসা হত না। গ্রামের দুই চারজন লোক সাপের কামড়ে মারা গেছেন, এরকম খবর ছোট বেলা থেকেই শোনা যেত। দয়াল বন্ধু যখন ক্লাশ সিক্সে পড়ে, এক কালীপূজার সন্ধ্যায় তাকে সাপে কামড়ায়। অন্ধকার রাস্তায় একটি সাইকেল এর পিছন পিছন হেঁটে যাচ্ছিল, ঐ সাইকেল একটি সাপের উপর দিয়ে চলে যায়। সেই আহত সাপ, পিছনেই দয়াল বন্ধু কে পেয়ে, পায়ে কামড় দেয়। সাইকেলে থাকা ভদ্রলোকের কাছে টর্চ লাইট ছিল, কিন্তু সাপ দেখা যায় নি। একশ মিটার পিছনেই স্বাস্থ্য কেন্দ্র। ডাক্তারবাবু অন্য কয়েকজনের সাথে বাজী পোড়ানোর জন্য তৈরী হচ্ছিলেন। সাথে সাথেই স্বাস্থ্য কেন্দ্র খুলে , পরীক্ষা করে, ডাক্তারবাবু জানিয়ে দেন যে ওটি বিষহীন সাপ ছিল।
এখন অনেকে মনে করেন, সেই ঘটনার জন্যই দয়াল বন্ধু সাপের কামড় নিয়ে এরকম মেতে গেছে। ব্যাপারটি সেরকম কিছু নয়। সেক্ষেত্রে, ডাক্তারী পড়ার সময়, দয়াল বন্ধু খুঁজে খুঁজে অনেক সাপের কামড় এর রুগীর চিকিৎসা দেখত। বাস্তবে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে পড়ার সময়, সে মাএ দুটি সাপে কাটা রুগী দেখেছে। গত কয়েক বছর খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন সারা বছরে, বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে হাজার এর বেশী সাপে কাটা রুগী ভর্তি হয়।
১৯৭৬ সালে , গ্রামের স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করে, কলকাতায় চলে আসে দয়াল বন্ধু, নতুন এগারো বারো ক্লাশে পড়তে। নতুন বারো ক্লাস শুরু হওয়ায়, নিজেদের স্কুলে সেই সময় বারো ক্লাস ছিল না। বন্ধুদের অনেকে পাঁচ কিমি দূরে অন্য স্কুলে ভর্তি হয়েছিল।
কলকাতার সেই শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয়ে একসময় রাজ্যের প্রয়াত মুখ্য মন্ত্রী বুদ্ধদেব বাবু পড়েছেন। কলকাতার সেই সময়, দয়ালবন্ধু আর তার মেজদার বেশ কষ্টের মধ্যে কেটেছে। মেজদা তখন কলেজের পড়া শেষ করে চাকরীর জন্য পরীক্ষা দিয়ে চলেছেন। রোজগার বলতে কয়েকটি টিউশন। থাকার জায়গা, বাবার স্কুলের বন্ধু সেনবাবুর কোম্পানির আপিস ঘরে। নিচের তলায় ছিল, কাঠের তৈরি ছাপা খানার ব্লক তৈরীর কারখানা। রাত্রে দারোয়ান ঐ কারখানা পাহারা দিত। আর মেজদা , পরে দয়াল বন্ধুও দোতলার আপিসের ঘর দুটিতে থেকে , অনেকটা রাতের পাহারার কাজও করে দিত। সেই সময় ওর থেকে ভালো কলকাতায় থাকার ব্যবস্থা করার সামর্থ ওদের ছিল না। বাবা মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়েছেন, ১৯৭১ সালে। তখন বাবার পেনশন চালু হয়নি। অবসরের নয় বছর পর, মাসে পঁয়তাল্লিশ টাকা পেনশন পেতেন। সামান্য কিছু চাষ আবাদ করে, কোন রকমে চলে যেত। গ্রামে থাকতে দয়াল বন্ধুও চাষের কাজ করেছে। ধান রোওয়া, পাট কাটা, আলু চাষ, মৌমাছি পালন, এসব কাজ বাড়ীর সকলেই করতেন। দুই বেলা প্রায় এক কিমি হেঁটে, মেডিক্যাল কলেজের উল্টো দিকে, ২৯ নং কলেজ স্ট্রীটে, মৃত্যুঞ্জয় জানা মশাই এর মেসে খেতে যেতে হত। সকালে সন্ধ্যায়, সেন বাবুর কোম্পানির আপিস শুরুর আগে আর পরে, সেই আপিসের চেয়ার টেবিল ছিল ওদের পড়ার আর রাত্রে শোয়ার জায়গা।
বারো ক্লাশের ফাইনাল পরীক্ষার মাস তিনেক আগে, ক্লাশের বন্ধুদের কাছে জানতে পারেন যে, জয়েন্ট এন্ট্রান্স নামে আর একটি পরীক্ষা দিয়ে, ডাক্তারী বা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে হয়। অনেক সাহস নিয়ে, মেজদার কাছে, জয়েন্টের ফর্ম কেনার জন্য, দশ টাকা চেয়েছিল, দয়াল বন্ধু। দয়াল বন্ধুর ছেলেরা যখন জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা দেয় , সেই সব সময় কোন কোচিং সেন্টারে না পড়ে কেউ সেই পরীক্ষার কথা ভাবতেই পারেনি।
বারো ক্লাশের পরীক্ষা আর জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিয়ে দয়াল বন্ধু গ্রামের বাড়িতে চলে আসে। সেই সময় ১৯৭৮ সালের কুখ্যাত বন্যা হল। সিজগেড়িয়া বা আশে পাশের কয়েকটি গ্রামে সেই সময় প্রায় প্রতি বছরই বন্যা হত। গ্রামের প্রায় সব লোকের বাড়ী বন্যায় ভেঙ্গে যায়। সেই ভাঙ্গা বাড়ীর মাটির উপর আরও মাটি ফেলে, উঁচু উঁচু টিলার মত করে, তার উপরে বাঁশ মাটি এসব দিয়ে বাড়ী করা হত। সহসা সেই সব বাড়ীতে বন্যার জল ঢুকত না। জল ঢুকলেও বাড়ী ভেঙ্গে পড়ত না। গ্রামের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া বড় রাস্তায় যাওয়ার জন্য, কলা গাছের ভেলা বা তাল গাছের ডোঙ্গা ব্যবহার করা হত। সেই সময় একদিন বিকেলে কলকাতা থেকে দাদার টেলিগ্রামে খবর গেল, দয়াল বন্ধু ডাক্তারী পড়ার সুযোগ পেয়েছে।
একটা পরীক্ষা দিয়েছিলাম। পরীক্ষাতে পাশ করেছি, এই পর্যন্ত বুঝলাম। কিন্তু এর পর কি হবে? পরদিন সকালে ছুটলাম কোলকাতা। সেই কংসাবতী নদী পর্যন্ত হেঁটে এসে, নদী পেরিয়ে বাস ধরে পাঁশকুড়া স্টেশনে এসে ট্রেনে চাপা। সেই সব দিনে, মা কোথা থেকে গাড়ী ভাড়ার জন্য গোটা পনের টাকা যোগাড় করতে পারেন, দয়াল বন্ধু ভাবতেই পারেনি। তার কদিন আগেও সম্ভবত এলুমিনিয়ামের হাঁড়ি নিয়ে, বাজারের লঙ্গরখানা থেকে খিচুড়ি এনেছিল।
কলকাতায় তো চলে এল। ততদিনে মেজদা একটা সরকারী চাকরী পেয়ে সেই সেন কাকুর আপিসের আস্তানা ছেড়ে, শহরতলীতে একটি বাসা ভাড়া নিয়েছেন। সেজদা, রাঙ্গাদা, আর মেজদার সহকর্মী বাঁকুড়ার নারায়ণদাদা , তার সাথে দয়াল বন্ধু। পাঁচ ভাইয়ের একটিই বড় ঘর। বারন্দায় রান্নার ব্যবস্থা। ঠিকই ছিল। কিন্তু ১৯৭৮ এর বন্যায় বাড়ীর উঠান থেকে দুর্গাণগর ষ্টেশন পর্যন্ত দেড়শ মিটার রাস্তা, মাস দেড়েক, হাঁটু জলের তলায় ডুবে থাকল।
বাঁকুড়ার হোস্টেলে থেকে পড়ার জন্য খরচ কত হবে , তাই নিয়ে দাদারা বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল। হোস্টেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য নতুন জামা প্যান্ট কেনার কথা ভাবাই হয়নি। দাদাদের গোটা দুই প্যাণ্টের কোমড়ের মাপ ছোট করে নেওয়া হল। মেজদা কলকাতায় আসার সময়, মায়ের বিয়ের সময় কেনা, মাঝারি মাপের যে ট্রাঙ্ক নিয়ে এসেছিল, সেটার আসল রং তখন আর ছিল না। মেজদা এক সন্ধ্যায় আপিস থেকে ফেরার সময় একটি ছোট্ট রঙের কৌটো আর ব্রাস কিনে ফিরলেন। রাত্রে বসে ঐ ট্রাঙ্ক রং করা হল। এক শীতের ভোরে ঐ ট্রাঙ্ক ভরে আগামী হোষ্টেল জীবনের যাবতীয় রসদ নিয়ে, বাঁকুড়ার দাদার সাথে বাঁকুড়া রওয়ানা হল, দয়াল বন্ধু। মাথায় উপর থেকে সরে গেল মেজদার দুই বছরের স্নেহের ছায়া। কিন্তু এই মেজদা আর সেজদার উপর চেপে বসে গেল, ভাইকে ডাক্তারী পড়ার রসদ যোগানোর পাহাড় প্রমাণ চাপ।
আমরা যখন শুনি, এ রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজের এক একজন ছাত্রের জন্য সরকার লাখ লাখ, কোটি কোটি টাকা খরচ করে , কিছুতেই বুঝতে পারি না, তাহলে দয়াল বন্ধুর মত গ্রামের থেকে পড়তে যাওয়া ছাত্রদের মাসে একশ আশি টাকা পাঠাতে, দাদাদের আধ পেটা খেয়ে থাকতে হয় কেন? ডেবরা ষ্টেট ব্যাংক এর ম্যানেজার এর কাছে, ভিখারীর মত হাত জোড় করে, চার হাজার টাকা এডুকেশন লোন চেয়ে, প্রত্যাখ্যাত হতে হয় কেন? সরকার লাখ লাখ টাকা খরচ করে, আর ঐ চার হাজার টাকা খরচ করে দিলেই তো, ঐ সব গ্রামের ছেলেকে , ভিখারীর মত হাত পাততে হয় না।
আসলে ব্যাংক ম্যানেজারের কাছে এরা “ ভিখারীই” বটে। ওনারা লোন দেন, আদায় এর নিশ্চয়তা থাকলে তবেই। পঁয়তাল্লিশ টাকা পেনশন পাওয়া অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক , যার মাটির বাড়ীতে খড়ের চাল, সে চার হাজার টাকা সুদ সমেত শোধ করবে কি করে? বছর দুই আড়াই এভাবে চলে যাওয়ার পর, যখন দয়াল এর কিছু দামী বই কেনার দরকার পড়ল, মেজদা আতান্তরে পড়ে গেলেন। শেষ পর্যন্ত মেজ বৌদির কিছু সোনার গয়না ব্যাংকে জমা রেখে কিছু টাকা লোন পাওয়া গেল। দেড় বছর পর MBBS পাশ করে শুরু হল, ইন্টার্নশিপ। মাসে সাড়ে চার শ টাকা স্টাইপেন্ড। তার থেকে মাসে দেড়শ টাকা করে ঐ ব্যাংক এর লোন শোধ করতে দেওয়া চলল। ধার , সুদে আসলে এমন এগিয়ে চলল যে, কেশব নাগের অংকের চৌবাচ্চা আর জলে ভরে না। শেষ পর্যন্ত মেজদি একটি হাই স্কুলে ডেপুটেশন ভ্যাক্যান্সি শিক্ষিকার কাজ পেয়ে ব্যাংকের লোন শোধ করতে শুরু করলেন। অনেক বছর পর, এই দয়াল বন্ধু, সেই ষ্টেট ব্যাংক এ কয়েক লাখ টাকা জমা দিয়েছে দেখে, ব্যাংক থেকে বার বার ফোন করে, ক্রেডিট কার্ড নিতে অনুরোধ করতে শুরু করলো। মানুষের জীবনে কত রোমাঞ্চ অপেক্ষা করে থাকে।
২০১৫ সালের মহালয়ার ভোরে দয়াল বন্ধু চলল কোলকাতা থেকে দিল্লী এরোপ্লেন এ চেপে। প্লেনের টিকিট কেটে পাঠিয়ে দিয়েছে, ভারত সরকার এর স্বাস্থ্য মন্ত্রক। এই দয়ালবন্ধু চল্লিশ বছর আগে, মেদিনীপুরের গ্রামের মাঠে ধান কাটার কাজ করেছে। ডাক্তার তো শত শত, হাজার হাজার বের হচ্ছে, প্রতি বছর। এইরকম উপন্যাস এর মত চরিত্র কটি পাওয়া যায়! ১৯৮৮ সালে দয়াল বন্ধু, কলকাতা বিশ্ব বিদ্যালয় এর পরীক্ষা পাশ করে, চোখের সার্জেন হয়েছে। মেদিনীপুরের আশ্রম হাসপতালে চোখের ডাক্তারের চাকরী দিয়ে পেশা জীবন শুরু। সেই সময় মেদিনীপুর লায়ন্স ক্লাবের সব ছানি অপারেশন শিবিরের দায়িত্ব দেওয়া হয়, চক্ষু সার্জেন ডা ডি মজুমদারকে। চোখের ডাক্তার হিসেব মেদিনীপুর জেলায় পরিচিতি লাভ করতে শুর হতেই, সরকারী চাকরী পেয়ে, চলে যেতে হল, সুদূর উওর বঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলায়। সেই সময় কয়েকটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কাজ করার সময়, কিছু সাপের কামড় এর রুগী পেলেও, বিশেষ প্রশিক্ষণ না থাকায়, সবই জেলা হাসপাতালে রেফার। কয়েক বছর গ্রামের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কাজ করার পর, রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে চোখের বিশেষজ্ঞ হিসেবে যোগ দিতে পারলেন ১৯৯৯ সালে। রায়গঞ্জে প্রথম চোখের মাইক্রো সার্জারি করেন এই দয়াল বন্ধু। কিন্তু ভবিতব্য মানুষকে কোথায় না টেনে নিয়ে যায়। ঐ ১৯৯৯ সালের শেষের দিকে ছেলে মারাত্বক ব্লাড ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হল। ছেলেকে নিয়ে ছুটতে হল, সুদূর মুম্বাই শহরে। সেখানে কয়েক মাস চিকিৎসার পর, বাকী চিকিৎসা কলকাতায় চলে আরও বছর দুই। স্বাভাবিক ভাবেই আর রায়গঞ্জে ফেরা হলো না। অনেক তদ্বির তদারকি করে, কলকাতার উপকন্ঠে, বারাকপুর মহকুমা হাসপাতালে ট্রান্সফার হয়ে আসা গেল। এখানে চোখের ডাক্তারী করার থেকে বেশী করতে হত, জেনারেল ইমারজেন্সি ডিউটি। এখানেও যে দুই একটা সাপের কামড় এর রুগী আসত, সবই কলকাতায় রেফার। ২০০২ সালে, জেলার মধ্যে ব্যবস্থা করে, হাবরা ষ্টেট জেনারেল হাসপাতালে চোখের ডাক্তার হয়ে চলে যেতে হল। এখানেও সব বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে সপ্তাহে একদিন কি দুদিন জেনারেল ইমারজেন্সি ডিউটি করতে হয়। বিশেষ করে গরমের সময় আর বর্ষায়, এই হাবরাতে অনেক সাপের কামড় এর রুগী আসে। কিন্তু চিকিৎসা যে যেমন ইচ্ছা করে। কোন নির্দিষ্ট প্রয়োগ বিধি বা প্রোটোকল ছিল না। এই ব্যাপারটি দয়াল বন্ধুর মাথায় একটা চিন্তা ভাবনা এনে দেয়। ২০০৭ সালের জুন মাসে; অনেক চেষ্টার পর, কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের, চোখের বিভাগে ট্রান্সফার অর্ডার বের হয়ে যায়। কিন্তু হাবড়ার মত হাসপাতালে পরিবর্ত চোখের ডাক্তার না এলে, ছাড়া পাওয়া সম্ভব নয়।
দয়াল বন্ধু মাঝে মাঝেই বারাসত হাসপাতালের পাশে, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের আপিসে গিয়ে , বড় সাহেবকে অনুরোধ করতে থাকে, ছেড়ে দেওয়ার জন্য। এই করতে করতে নয় মাস কেটে যায়। একজন কলকাতার মেডিক্যাল কলেজে ট্রান্সফার হয়ে ঘুরে বেড়ানো, চোখের ডাক্তারের কাছে, গ্রামের হাসপাতালের জেনারেল ইমারজেন্সি ডিউটি করা কী ভয়ঙ্কর হতাশার, ভুক্তভোগী ছাড়া বোঝা সম্ভব নয়। সেই ২০০৭ সালের জুন মাসেই ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন এর জার্নাল, JIMA ( জার্নাল অফ ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল আসোশিয়েসন) তে, সাপের কামড় এর চিকিৎসা বিষয়ে একটি বড় নিবন্ধ বের হয়ে, দয়াল বন্ধুর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এর আগে ক্যানিং যুক্তিবাদী সমিতির একটি সাপের ক্যালেন্ডার , মেদিনীপুরের গ্রামের বাড়ি থেকে এনেছিল দয়ালবন্ধু। ছটি বিষধর সাপ আর ছটি বিষহীন সাপ এর পরিচয় ছিল ওই ক্যালেন্ডার এ। মেডিক্যাল জার্নাল এর নিবন্ধ আর যুক্তিবাদী সমিতির সাপের ছবি নিয়ে , একটা ক্লিনিক্যাল প্রেজেন্টেশন তৈরী করে ফেলল, দয়াল বন্ধু। হাবড়ার সহকর্মী , নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ ডা চান্দ্রেয়ী ব্যানার্জীর প্রবল উৎসাহে, ২০০৭ সালের সাতই আগষ্ট, হাবরা হাসপাতালে অনুষ্ঠিত হয় সেই ঐতিহাসিক সাপের কামড় নিয়ে ক্লিনিক্যাল মিটিং। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের আসার কথা থাকলেও আসতে পারেন নি। কিন্তু মাস দুই পরে এই বড় কর্তা ডা কুসুম কুমার অধিকারী মশাই এর একটি উৎসাহ দেওয়া কথাই দয়াল বন্ধুর এই সাপের কামড় এর কাজকে অনেক এগিয়ে দেয়।
আসলে কিন্তু বড় সাহেব নয়। একজন সাধারণ কর্মচারি, যার সাথে সাপের কামড় এর চিকিৎসা বা ঐ রকম কোন কিছুর কোন সম্পর্ক নেই, সেই হাবড়া হাসপাতালের চক্ষু পরীক্ষক, অর্থাৎ অপ্টোমেট্রিস্ট গোবিন্দ চন্দ্র মণ্ডল এর কিছু কিছু পদক্ষেপ, দয়াল বন্ধুর এই সাপের কামড় এর কাজকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। ঐ সাতই আগষ্ট এর ক্লিনিক্যাল মিটিং এ, গোবিন্দবাবু পিছনের বেঞ্চে বসে ছিলেন। চোখের ডাক্তার আবার সাপের কামড় নিয়ে কি বলে, সেই কৌতূহলে। সেদিনের মিটিং এ উপস্থিত ডাক্তারবাবুরা কতটা কি শিখেছিলেন, বা কেউ কেউ উৎসাহিত হয়েছিলেন কি না, সেকথা আর জানা যায়নি। কিন্তু পরদিন থেকে গোবিন্দ বাবু দয়াল বন্ধুর পিছনে পড়ে যান। ঐ সাপের ছবি ইত্যাদি দিয়ে কয়েকটি সি ডি করে দিতে হবে। তার জন্য দয়াল বন্ধুর বাড়ীর কম্পিউটার উন্নত করতে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে চান। শেষ পর্যন্ত ওনার চাপেই কয়েকটি সি ডি তৈরী করা হয়। গোবিন্দ বাবু সেই সাপের সিডি ব্যাগে নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন। কারও বাড়ীতে কম্পিউটার দেখলেই তাকে ঐ সিডি দিয়ে দেখতে বলতেন। এভাবেই একটি সিডি, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছেও দিয়ে আসেন। কদিন পরেই জেলার এক অনুষ্ঠানে ঐ বড় কর্তার সাথে দয়াল বন্ধুর দেখা হয়ে গেল। ঐ সাপের সিডি দেখেছেন কি না জানতে চাইলে, বড় সাহেব অত্যন্ত উৎসাহ ব্যঞ্জক কটি কথা বলেন। তাতেই দয়াল বন্ধু নিজেও কটি সিডি তৈরী করে পরিচিত লোকজনকে বিতরণ করা শুরু করে। এভাবেই একটি সিডি পৌঁছে যায়, সুদূর আমেদাবাদ মিউনিসিপ্যাল মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক ডাঃ জয় কে শেঠের কাছে। উনিই প্রথম সেই সিডি দেখিয়ে তাঁর মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তার, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সাপের কামড় এর প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।
এতে উৎসাহিত হয়ে, দয়াল বন্ধু, এই রাজ্যের সকল মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের কাছে চিঠি পাঠায়, সাপের কামড় এর চিকিৎসা বিষয়ে MBBS ছাত্র ছাত্রী দের অন্তত একটি ক্লাশের ব্যবস্থা করতে। রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা মহাশয়ের সাথে দেখা করেও ঐ অনুরোধ করা হল। কিন্তু কোন লাভ হল না। এমনকি তৎকালীন রাজ্যপাল, মাননীয় গোপাল কৃষ্ণ গান্ধী মহাশয়ের হস্তক্ষেপের পরও কোন মেডিক্যাল কলেজে নিয়মিত সাপের কামড় এর ক্লাশ শুরু করা গেল না।
২০০৮ সালে দয়াল বন্ধু কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের চক্ষু বিভাগে কাজে যোগ দিয়েছে। পরের বছর ঐ কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সলিল ভট্টাচার্য মশাই তাঁর বিভাগে, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ঐ সাপের কামড় এর চিকিৎসা বিষয়ে প্রশিক্ষণ এর ব্যবস্থা করেন। সেই প্রশিক্ষণ দিতে প্রতি শনিবার করে, চোখের বিভাগের কাজ সেরে, দয়াল বন্ধু চলে যেতেন কলেজ বাড়ীতে। বছর পাঁচেক পর সলিল ভট্টাচার্য স্যার অন্য কলেজে চলে গেলে, সেই ক্লাসও বন্ধ হয়ে গেল।
২০১১ সালের দূর্গা পূজার দশমীর দিন, গ্রামের বাড়ি থেকে কলকাতায় ফেরার সময় একটি নাটকীয় যোগাযোগ হল। পূজার সময় গ্রামের ওদিকে গাড়ী প্রায় থাকেই না। ভাইপোর মোটর সাইকেলে আশারি বাঁধে এসে , বম্বে রোডের থেকে গাড়ী ধরার জন্য আসছিল দয়াল বন্ধু। ঐ আসারি বাঁধ মোড়ের দুর্গাপূজার জন্য রাস্তার পাশে পাশে দোকান পাট, মেলার মত বসেছিল।সেই মেলায় রাস্তার পাশে তাবু খাটিয়ে কিছু মাটির মূর্তি বানিয়ে, কিছু শিক্ষা মূলক বার্তা দেওয়া হয়েছিল। দয়াল বন্ধুর ভাইপো সেই একটি তাঁবুর পলিথিনের পর্দা সরিয়ে একটি বারোয়ারী মডেল দেখায়। সেখানে একটি সাপে কাটা রুগী নিয়ে ওঝা ঝাড়ফুঁক করছে, আশা দিদিমণি বলছেন, এখানে সময় নষ্ট না করে, তাড়াতাড়ি হাসপতালে নিয়ে যাও। কতো সুন্দর বার্তা একটি। সাথে ডিজিটাল ক্যামেরা ছিল; দয়াল বন্ধু একটি ছবি তুলে নিয়ে কলকাতা ফিরে আসে। কিন্তু ঐ ব্যাপারটি মাথা থেকে যায় না। ঠিক তার আগের দিন, হলদিয়া থেকে এক ভদ্রলোক ফোন করে জানতে চান যে, কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি সাপে কাটা রুগীর জন্য কোথায় গেলে, আন্টিভেনম কিনতে পাওয়া যাবে! রুগী হলদিয়া হাসপাতাল, তমলুক হাসপতালেও সাপের কামড় এর চিকিৎসা না পেয়ে, কলকাতায় রেফার হয়ে এসেছে। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজেও আন্তিভেনম নেই, কিনতে বলেছে। এর থেকে হতাশার খবর আর হয় না। তার আগের চার বছর ধরে দয়াল বন্ধু আর তার মত মানসিকতার কিছু স্বেচ্ছাসেবী প্রচার করে চলেছে, সব সরকারী হাসপতালে সাপের কামড় এর চিকিৎসা হয়। সেই দুর্গাপূজার মেলা থেকে তোলা ছবি, আর হলদিয়ার সেই রুগীর চিকিৎসা বিভ্রাটের কথা লিখে, ই মেলে, তৎকালীন প্রধান স্বাস্থ্য সচিব, সঞ্জয় মিত্র মশাই কে পাঠিয়ে দেয়া হয়। উনি দয়াল বন্ধু কে কোন উত্তর দেননি। কিন্তু কাজের কাজ করে দিয়েছিলেন। স্বাস্থ্য ভবনের বড় বড় কজন আধিকারিককে ডেকে, সাপের কামড় নিয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। যথেষ্ট টাকা পয়সারও ব্যবস্থা করে দেন।
স্বাস্থ্য ভবনের সেই বড় আধিকারিকেরা খুঁজতে থাকেন, দয়াল বন্ধু মজুমদার নামের “ বদ্ধ পাগল” লোকটিকে। শেষ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া গেল, “ ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো” চোখের ডাক্তার দয়াল বন্ধু মজুমদার কে। আর পিছনে তাকানোর সুযোগ ছিল না। বারবার স্বাস্থ্য ভবনে গিয়ে গিয়ে, কর্তাদের সাথে মিটিং করে, সারা দেশের মধ্যে প্রথম, পশ্চিম বাংলার নিজস্ব, “ সাপে কাটার চিকিৎসা বিধি” তৈরী করা হয়, ২০১২ সালে। সামান্য মাজা ঘষা করে সেই চিকিৎসা বিধি আজও চলছে। সেই ২০১২ সালের পর থেকেই, এ রাজ্যের সকল সরকারী হাসপতালে সাপের কামড় এর চিকিৎসা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সেই ২০১৩ সাল থেকে এখনও, বছরে বছরে, স্বাস্থ্য বিভাগের নুতুন ডাক্তারবাবুদের, এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ চলছে। প্রথম প্রায় সাত -আট বছর, অন্য প্রায় কোন প্রশিক্ষক পাওয়া যায়নি। দয়াল বন্ধু সারা রাজ্যের সব জেলায় জেলায় ঘুরে ঘুরে এই প্রশিক্ষণের কাজ করে যাচ্ছিলেন। ২০২০ সালের পর থেকে অনেক বড় বড় মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষককে এই প্রশিক্ষণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, কিন্তু হাতে গোনা তিন চার জনের বেশী প্রশিক্ষক পাওয়া যায়নি। কোভিড মহামারীর পর, দয়াল বন্ধুর হাতে তৈরী কিছু কিছু ডাক্তার বাবু প্রশিক্ষণের কাজ করতে শুরু করেছেন। মেদিনীপুরের ডা শুভেন্দু বাগ, বাঁকুড়ার ডা হিমাদ্রী কুমার পাল, বর্ধমানের ভাতারের ডা মানস দত্ত, সিউড়ির ডা প্রসূন কুমার দাস এখন সাপের কামড় এর ভালো প্রশিক্ষক হিসেবে তৈরী হয়েছেন। ওনারা সুনামের সঙ্গে এই কাজ এখন করছেন।
আগেই লেখা হয়েছে, ২০১৫ সালে দিল্লি থেকে, জাতীয় চিকিৎসা বিধি তৈরীর জন্য রাজ্য থেকে একজনকে পাঠাতে বললে, স্বাস্থ্যভবন থেকে দয়াল বন্ধুকে পাঠানো হয়। শুধু নুতুন ডাক্তারবাবুদের প্রশিক্ষণ নয়, গ্রামে গঞ্জে ঘুরে ঘুরে জন সচেতনতার কাজও সমানে চলেছে। এই কাজে অত্যন্ত উৎসাহী দুইজন শিক্ষক মহাশয়কে পাওয়ায় দয়াল বন্ধুর কাজ কিছুটা সহজ হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাশপুর থানার শিক্ষারত্ন প্রধান শিক্ষক সুব্রত কুমার বুড়াই আর বাঁকুড়ার রাধানগর উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয় এর শিক্ষক সৌম্য সেনগুপ্ত অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে সাপের কামড় এর জন সচেতনতার কাজ করে যাচ্ছেন বছরের পর বছর ধরে। এনাদের মত আরও অনেক শিক্ষককে এগিয়ে আসতে হবে।
সরকারী চাকরী থেকে অবসর নেওয়ার প্রায় দেড় বছর পরও স্বাস্থ্য ভবন থেকে ডাক আসছে, ডাক্তারবাবুদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করার। অবসরের কিছুদিন আগে থেকেই বোঝা যাচ্ছিল, সহজে ছুটি পাওয়া যাবে না। তাই নিজে স্বশরীরে উপস্থিত না হয়েও যাতে প্রশিক্ষণ সহ অন্য কাজগুলো চলতে থাকে, সেই জন্য দয়াল বন্ধু নিজের প্রশিক্ষণ ও জনসচেতনতার কাজগুলি ভিডিও আকারে প্রকাশ করেছেন, নিজে নিজেই। জেলা স্তর এর প্রশিক্ষণে সেগুলি ব্যবহার করা হচ্ছে। একটু বেশী বয়সে সরকারী চাকরী পেয়ে, প্রায় তিরিশ বছর চাকরী করার পর, নিজের আর পরিবারের জন্য একটু বেশি সময় দেওয়া দরকার মনে হচ্ছে। এত বড় দেশের কত শত জায়গা দেখাই হয়নি। দেশের ঊনত্রিশ টি রাজ্যের মধ্যে গোটা দশেক রাজ্যও ঘোরা হয়নি। এবার বছরে অন্তত দুটি করে রাজ্যে ঘুরতে হবে। সরকারী চাকরীর কঠিন বেড়াজাল কাটিয়ে বিদেশে যাওয়া হয়নি কোনোদিন। তাই অবসরের এক বছর পর বেরিয়ে, একবারেই ইউরোপের গোটা দশেক দেশ ঘুরে এসেছেন। আপাতত দেশের মধ্যে ভ্রমণ করে আর ভ্রমণ কাহিনী লিখে সময় কাটছে।
রাজ্যের আর দেশের জন্য চিকিৎসা বিধি তৈরীতে দায়িত্ব পালন ছাড়াও সাপের কামড় নিয়ে কয়েকটি যুগান্তকারী কাজ করেছেন ডা দয়াল বন্ধু মজুমদার। দ্রত হাসপাতালের চিকিৎসা নিতে যাতে সাপে কাটা রুগী কে সময় মত নিয়ে যায় তার জন্য, “ রুল অফ হান্ড্রেড” বা ১০০ সংখ্যার নিয়ম, এই দয়াল বন্ধু মজুমদার এর নিজস্ব আবিষ্কার। এছাড়া রহস্যময় কালাচ সাপের কামড় এর বিচিত্র রোগ নির্ণয় পদ্ধতি নতুন ডাক্তরবাবুদের মধ্যে ব্যাপক ভাবে প্রচার করে, শত শত রুগীর প্রাণ বাঁচানোর ব্যবস্থা হয়েছে। দয়াল বন্ধুর নতুন ছাত্রেরা ওনার দেখানো পদ্ধতিতে সাপের কামড় এর চিকিৎসা বিষয়ে উৎসাহিত হচ্ছেন, এটা একটা বিশাল প্রাপ্তি।